বরগুনার তালতলী উপজেলার পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে সাত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছেন হাজারো মানুষ। বসতবাড়িসহ কৃষিজমি হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। ভুক্তভোগীরা দ্রুত বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, মঙ্গলবার (১২ জুলাই) ভোররাত থেকে পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ায় উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুটি অংশ আকস্মিক ভেঙে প্রায় ১০০ মিটার পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
এতে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে ওই ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম। পানির এ অবস্থা দেখে গ্রামবাসীর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এই গ্রামের পাশেই রয়েছে সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা গ্রাম। পানির আতঙ্কে এই গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দাও নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। গত দুই দশক ধরে ভয়ংকর পায়রা (বুড়িশ্বর) তালতলী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এবং জয়ালভাঙ্গা গ্রামের হাজার হাজার একর ফসলি জমি এবং ঘরবাড়ি গ্রাস করেছে।
ভাঙনে সব হারিয়ে অনেক গ্রামবাসী বাস্তুচ্যুত হয়ে ঢাকা কিংবা বরিশালের বস্তিতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। নতুন করে বাঁধে ভাঙন শুরু হওয়ায় নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের সোবাহানপাড়া, অংকুজানপাড়া, জয়ালভাঙ্গা ও তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের চার হাজার মানুষের মধ্যে পানির আতঙ্ক শুরু হয়েছে। নলবুনিয়া গ্রামের ষাটোর্ধ্ব নারী আলেয়া বেগম আক্ষেপের সুরে বলেন, বাবা, মোগো গ্রাম পানিতে তলাইয়া গেছে, মোরা এহন কুম্মে থাকমু, কই যামু।
জেলে নুরুল ইসলাম বলেন, খালি নদী ভাইঙ্গা মোগো সব শ্যাষ কইর্যা দেছে। যেডু জমি আছে হ্যাও ভাইঙ্গা গ্যালে পোলা-মাইয়া লইয়া কোনহানে যামু, এহন হেই চিন্তায় আছি। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের এমাদুল নামের এক ব্যক্তি বলেন, তিন বিঘা জমি ছিল, ছিল বড় বাড়ি। ছয়বারের ভাঙনে সব নদীতে লইয়া গ্যাছে। ভাঙনে সব বিলীন হওয়ায় এখন এক শতাংশ ফসলের জমিও নাই। কোনোমতে রাস্তার ধারে একটা ঘর বানাইয়া পোলা-মাইয়া লইয়া ঘুমাই। হেও আবার এহন ভয়ের মধ্যে আছি, ভাঙনে আবার ঘরডা লইয়া যায় কি না?
অপরদিকে সিডর, আইলা ও রোয়ানুসহ একাধিক দুর্যোগে ভাঙনে আমতলী উপজেলার বালিয়াতলী গ্রামটি বিলীনের পথে। এখানে বসবাসরত শত শত বাসিন্দা তাদের বসতবাড়িসহ কৃষিজমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। একই অবস্থা একই উপজেলার চাওরা ইউনিয়নের বৈঠাকাটা গ্রামেরও। এই গ্রামটিও একাধিকবার পায়রা (বুড়িশ্বর) নদীর ভাঙনে শত শত গ্রামবাসী জমি হারিয়ে এখন পথের ফকির হয়ে গেছে।
সর্বশেষ পানি উন্নয়ন বোর্ড এখানে একটি রিংবাঁধ নির্মাণ করলেও তা-ও এখন হুমকির মুখে রয়েছে। স্থানীয় গ্রামবাসী ভাঙনকবলিত স্থানে ব্লক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম সোহাগ বলেন, বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই এর অনুমোদন পেয়ে যাব এবং এর কাজ শুরু করে দেব। ইতিমধ্যে এখানে সিআইপি প্রকল্পের ফেস-২-এর সার্ভে কাজ চলমান আছে। দ্রুত স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন