কত কিছুই না বদলে দেয় প্রবাসীদের প্রবাস জীবন। প্রবাসী ভাইয়ের নাম আজিল্কা (ছদ্মনাম), বাংলাদেশে থাকা তার সন্তানের খেলনা বালিশের পাশে রেখেই ঘুমান তিনি।
আজিল্কার (৩৫) বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। একটু অদ্ভুত স্বাভাব তার। তার গল্পটাই আজ তুলে ধরবো আপনাদের জন্য।
আজিল্কা সৌদি আরবে আছেন চৌদ্দ বছর ধরে। শুরুতে মোবাইল টেকনেশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করেন। সৌদিকরণ নীতি আইন আসার পর থেকে কত কাজই না বদলাতে হয় তাকে। প্রবাসে টিকে থাকার লড়াইয়ে এখন তিনি কাজ করেন হোম ডেলিভারি সার্ভিসে।
কিন্তু আজিল্কা ভাইয়ের মন এখন আার সৌদিতে নেই। অশ্রু টলটল চোখে ব্যাক্ত করেন এভাবে,
"কবে ফিরবো এই প্রবাস থেকে জানি না। আগে একা ছিলাম, এখন পরিবারে চারজন। তারা আশায় আছে, অনেক স্বপ্ন তাদের মনে"।
কত কিছুই না বদলে যায় এ কষ্টিপাথরের প্রবাস-সময়, প্রবাসী জীবনে! কত স্বপ্ন ছিল, নিয়ে সব কেড়ে নিলো এ দুঃসহ সময়।
আজিল্কা দেশে যান না অনেকদিন ধরে। কাজ শেষে বাসায় ফিরে বাড়িতে ফোন দেন। তার বালিশের পাশে পড়ে থাকা বাঁশি আর খেলনা গাড়ি, সন্তানকে স্পর্শ করতে না পারার কষ্ট।
আহ! বাঁশি বাজিয়ে সন্তানকে আকৃষ্ট করার নিদারুণ চেষ্টা। প্রবাসী আজিল্কা ভিডিও কলে স্ত্রী-সন্তানদের দেখে কষ্ট চাপেন বুকে। মায়ার বাঁধনে বাঁধা মনে একটু খানি সুখের তৃপ্তি নিয়ে আসেন একনজর দেখার মাধ্যমে।
সময় গড়িয়ে যায়, বাড়তে থাকে বয়স। আর প্রবাস জীবনের ডায়েরির পাতায় জমতে থাকে ধুলো।
আজকাল আজিল্কা শুধু স্বপ্ন দেখেন, তিনি পরিবার নিয়ে ঘুরতে গেছেন, বেড়াতে গেছেন, আনন্দ করছেন।
আজিল্কাই নয়, শুধুমাত্র আর্থিক টানাপোড়েনের কথা ভেবেই কত শত মানুষ বছরের পর বছর পাড়ি দিচ্ছে প্রবাসে। যাদের চোখে আছে হাজারো স্বপ্ন আর বুক জুড়ে মায়ায় ভরা এক বিশাল সমুদ্রময় পরিবারকে কাছে পাওয়ার কষ্ট, আকাঙ্খা।
একজন আজিল্কা, হাজার মাইল দূরে থাকলেও তার মন পড়ে থাকে সবুজের দেশ, রুপসী বাংলাদেশে। প্রিয় জন্মভূমি, পরিবারের প্রিয় সদস্য, প্রিয়তমা স্ত্রী ও সন্তানদের এক ঝলক দেখার জন্য মন কাঁদে বারেবার, শতবার, হাজারবার।
৫ বছর আগে যে সন্তান জন্ম নিয়েছে, সে এখন দুরন্ত, হেটে চলে, ছুটে বেড়াই। কিন্তু, আহ! কিযে কষ্ট! নয়ন ভরে দুটি চোখে দেখা হয়নি আজও, গাল ভরে দুটি পাপ্পি দিতে না পারার কষ্ট, বুকের মাঝে জড়িয়ে নিয়ে করা হয়নি আদর।
"দেশে যাবো, দেশে যাবো" এই কথা জপতে জপতে কাটে প্রবাসের প্রতিটি দিন। প্রতিটি ক্ষণ যেন কি এক নিদারুণ শুন্যময় যন্ত্রণা নিয়ে কাটে আজিল্কার দিন। সহস্র স্বপ্নের মালা, দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, স্বপ্ন পূরণ হয় না তবুও। দেশে যাওয়ার শুভক্ষণটিও মেলানো হয় না তার।
প্রত্যেকের জীবনটা ছবির মতো সুন্দর, শিল্পীর তুলিতে আকা কারুকার্যময় রঙ্গিনের মহিমায় মহিমান্বিত হতে পারতো সবার জীবন। সবাই ছোট ছোট স্বপ্ন বুকে লালন করে বেঁচে থাকে, কত ছোট বড় স্বপ্ন নিয়ে, শত দুঃখ কষ্টের মাঝে ও জীবন চলে যায় আপন গতিতে। জীবন বয়ে চলে সময়ের নিয়মে। ঠিক তেমনিই স্বপ্নের প্রবাসে, সকল প্রবাসীরা অধিকাংশই এক একজন আজিল্কা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন