ফ্রান্সের মুসলিম নেতাদের ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ রক্ষায় একটি সনদ মেনে নিতে এই আল্টিমেটাম জারি করা হয়েছে। ইসলামের বিস্তৃতি ঠেকাতে তিনি এমন কড়া অবস্থান নিয়েছেন বলে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সনদটি মেনে নিতে বুধবার ফ্রান্স কাউন্সিল অব দ্য মুসলিম ফেইথ (সিএফসিএম)-কে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দেয়।এই সনদে বলা হয়েছে, ইসলামকে শুধু ধর্ম হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে, রাজনৈতিকভাবে নয়। ফরাসি মুসলিম সংগঠনদের ওপর বিদেশি কোনও প্রভাব বিস্তারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।বুধবার রাতে ম্যাক্রোঁ ও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিয়ান প্রেসিডেন্টের বাসভবনে সিএফসিএমের আটজন নেতার সঙ্গে দেখা করেন।
মুসলিমদের নেতাদের প্রতি একটি সনদ উপস্থাপন করেন ম্যাক্রোঁ। যাতে ফ্রান্সের মুসলিমদের জন্য আচরণবিধি ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- হোম-স্কুলিং বা ঘরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ধর্মীয় কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া বা ভয় দেখানো হলে আরও কঠিন শাস্তির বিধান।
নতুন আইনের অধীনে শিশুদের একটি পরিচিতি বা আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রদান করা, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে তারা স্কুলে যাচ্ছে কি-না। যেসব অভিভাবক এই আইন অমান্য করবে, তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা-সহ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হতে পারে।
কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত তথ্য, যার মাধ্যমে তার ক্ষতি করা সম্ভব হতে পারে, সেই ধরনের তথ্য শেয়ার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা। সিএফসিএম ইতোমধ্যে একটি জাতীয় ইমাম কাউন্সিল করবে বলে সরকারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একমত হয়েছে। সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে এ কাউন্সিল কোনও মসজিদের ইমাম নিয়োগ দেবে, যাকে পরবর্তীতে প্রত্যাহার করাও যাবে।
এ বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দারমানিন লা ফিগারো পত্রিকাকে বুধবার বলেন, ‘আমাদের শিশুদের ইসলামিস্টদের থাবা থেকে বাঁচাতে হবে।’প্রস্তাবিত খসড়া আইনটি নিয়ে ৯ ডিসেম্বর ফরারি মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য সম্প্রতি খুন হওয়া ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে সম্মান জানাতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ম্যাক্রোঁ বলেন, ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না।এরপরই ফ্রান্সের মুসলিমরা ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন, তাদের ধর্মকে দমন করা ও ইসলামফোবিয়াকে বৈধতা দিতে চেষ্টা করছেন তিনি।
ম্যাঁক্রোর এমন বিতর্কিত মন্তব্যের পরই তুরস্ক এবং পাকিস্তানসহ বেশ কয়েকটি আরব দেশ নিন্দা জানিয়েছে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেছেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসা দরকার।
জবাবে মুসলিম বিশ্ব থেকে ফরাসি পণ্য বয়কটের ডাক আসে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগানসহ অনেক মুসলিম নেতা ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের আহ্বান জানান। এর পর থেকে পুরো মুসলিম বিশ্বেই ফরাসি পণ্য বয়কটের হিড়িক পড়ে গেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন