উহান থেকে করোনা পৌঁছে গেল পুরো বিশ্বে, কিন্তু বেইজিং-সাংহাই এ প্রবেশ করতে পারলো না!

উহান থেকে করোনা পৌঁছে গেল পুরো বিশ্বে, কিন্তু বেইজিং-সাংহাই এ প্রবেশ করতে পারলো না!

বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯)।  প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে দুনিয়াজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। শনিবার (২৮ মার্চ) জরিপ পর্যালোচনাকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটার এ তথ্য জানিয়েছে।

 

সংস্থাটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৯৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় লাখ পাঁচ হাজার ৩১৪। এর মধ্যে ২৭ হাজার ৬১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক লাখ ৩৪ হাজার ৭৪ জন।

 

বিশ্বের বড় বড় নেতা, হলিউড তারকা, অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী, কানাডার প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এবং এখন পর্যন্ত ব্রিটেনের যুবরাজ চার্লস পর্যন্ত করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।

 

কিন্তু এখন পর্যন্ত চীনের একজন নেতা, এমনকি কোনো সামরিক কমান্ডারকেও স্পর্শ করেনি করোনাভাইরাস।

 

বিশ্ব অর্থনীতিকে ইতিমধ্যে ধ্বংস করে দিয়েছে, হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে ভুগছে এবং কোটি মানুষ ঘরে ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে, অনেক দেশ লক হয়ে গেছে। ঘোর আতংকে কাটছে সারা বিশ্বের প্রতিটি প্রহর।

 

করোনারভাইরাসটি চীনের উহান শহর থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এখন বিশ্বের প্রতিটি কোণে পৌঁছেছে, তবে আশ্চর্যের বিষয় ভাইরাসটি চীনের রাজধানী বেইজিং এবং অর্থনৈতিক রাজধানী সাংহাইয়ে পৌঁছায়নি। অথচ শহরগুলির মধ্যে খুব একটা দূরত্ব নেই।

 

উহান থেকে সাংহাই = 839 km

উহান থেকে বেইজিং= 1152 km

উহান থেকে মিলান = 15000 km

উহান থেকে নিউইয়র্ক = 15000 km

উহান থেকে ইটালি = 8695 km

উহান থেকে ভারত = 3695 km

উহান থেকে ইরাণ = 5667 km

বেইজিং এমন এক শহর যেখানে চীনের সমস্ত নেতারা বাস করেন, সামরিক নেতারা এখানে বাস করেন, যারা চীনের শক্তি তারা এখানে বাস করে, বেইজিংয়ে কোনও লক ডাউন নেই, এখানে সব খোলা রয়েছে, করোনার কোনও প্রভাব নেই।

সাংহাই হল সেই শহর যা চীনের অর্থনীতি পরিচালনা করে, এটি চীনের অর্থনৈতিক রাজধানী। এখানে চীনের সমস্ত ধনী ব্যক্তি বাস করে, শিল্প পরিচালনা করে, এখানে কোনও লক ডাউন নেই, এখানে করোনার কোনও প্রভাব নেই। করোনা পুরো বিশ্বে পৌঁছে গেলেও বেইজিং ও সাংহাই পৌঁছাতে পারেনি।

সম্ভবত পুরো বিষয়টি চীনের পরিকল্পনামাফিক তাই করোনা উহান শহর টপকাতে পারেনি কিন্তু পুরো বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। নিউমোনিয়ার মত লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে চীনা কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

 

আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওমিটারের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট এক লাখ চার হাজার ২৫৬ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৭০৪ জনের। তবে মৃতের হিসাবে শীর্ষে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ১৩৪। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৪৯৮ জন।

মৃতের হিসাবে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে স্পেন। দেশটিতে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ১৩৮। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৭১৯। স্পেনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে চীনে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১ হাজার ৩৯৪ জন। এর মধ্যে তিন হাজার ২৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ৪৮ জন। সরকারি হিসাবে, মোট মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪৪ জন। এর মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাকিস্তানে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৪০৮ জন। ‍এর মধ্যে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উহানের একটি সি ফুড মার্কেটে কোনো প্রাণী থেকে এ ভাইরাস প্রথম মানুষের দেহে আসে। তারপর মানুষ থেকে ছড়াতে থাকে মানুষে।

করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মত। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password