ঢাকায় শনিবার পর্যন্ত মাঝারি বৃষ্টি হলেও রোববার থেকে হতে পারে ভারী বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে সিলেটে। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে কিছু এলাকায় এখনও বন্যা পরিস্থিতি চলছে। এর মধ্যেই সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া অফিস আরও জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহজুড়েই বৃষ্টি হতে পারে। ইতোমধ্যে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিকে ভারী বৃষ্টিপাত হিসেবে ধরা হয়। ৮৯ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে তাকে ধরা হয় অতি ভারী বৃষ্টি হিসেবে। আবহাওয়া বিভাগ জানায়, উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও এর আশপাশের এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বিহার, লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
আজ শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমে যেতে পারে।
শনিবার (২৯ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এসময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
রবিবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। এসময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫১ মিলিমিটার। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে মাদারীপুরে ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
--নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস-- বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, এখন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বাড়ছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে।
তারা আরও জানায়, আবহাওয়া সংস্থাগুলো দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারী এবং আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানিসমতল বাড়তে পারে।
আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা, সারিগোয়াইন নদীর পানিসমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
--পাহাড় ধসের সতর্কতা-- আজ ২৮ জুন থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার জন্য দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া বিভাগ। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এলাকায় ভূমিধসের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
--সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা-- আবহাওয়া বিভাগ আরও জানায়, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে গভীর সঞ্চরণশীল মেঘমালা সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
এ জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৩ নম্বর সংকেত বলতে বোঝায়, বন্দর ও বন্দরে নোঙর করা জাহাজগুলো দুর্যোগকবলিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বন্দরে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং ঘূর্ণি বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন