২০২০-২১ সাল ছিলো বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের জন্য খারাপ সময়। এক্সপোর্ট প্রমোশান ব্যুরোর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যমতে ৩৫ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করে বাংলাদেশ।
কিন্তু সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের চরম ঊর্ধ্বগতির ফলে ট্রেড ডেফিসিট কভার দিতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। একই সাথে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট সারপ্লাস হয়।অতি ঊর্ধ্বমুখী রিজার্ভ এর ফলে সম্পদ গলার কাঁটা হয়ে যায়। রিজার্ভে ঊর্ধ্বগতি এটা যে শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হয়েছে তা নয়। এই সারপ্লাস রিজার্ভ এর ইস্যুটা ইন্ডীয়ার ক্ষেত্রে ও অবাক করা।ওদের বৈদেশিক ঋণের থেকে রিজার্ভে ডলার বেশী। এবং পাকিস্তান গত ৫-৬ বছরে প্রথমবারের মতন নিজের অর্থ দিয়ে ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট সারপ্লাস করেছে। কিন্তু আমাদের ভয়ের বিষয়টা ছিল রপ্তানিতে নিম্নমুখী ইনডেক্স। ২ বছর আগেও বাংলাদেশ ৪১ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করতো। এবছর ৩৫ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট করেছে।
সস্তির বিষয় হচ্ছে এ বছর বাংলাদেশের রপ্তানি ৫০ বিলিয়ন ডলার মার্ক টাচ করার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাইরের দেশ থেকে যে অর্ডার আসছে টেক্সটাইল মিল গুলোতে সেটার মাত্র ৬০% অর্ডার ফুলফিল করার সক্ষমতা আছে বাংলাদেশের।এ জন্য দেশে এ বছরি ক্যাপাবিলিটি বিল্ডিংয়ে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট এসেছে। অনেকে মনে করে থাকে বাংলাদেশ ইউরোপ থেকে GSP হারালে আমাদের অর্থনীতি নেগেটিভে চলে যাবে। বস্তুত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড়বাজার আমেরিকায় বাংলাদেশ ২০১৩ সাল থেকেই GSP সুবিধা ছাড়া ঊর্ধ্বগতি রপ্তানি কায়েম রেখেছে।এই হচ্ছে এক্সিস্টিং পজিটিভ পরিস্থিতি। কিন্তু আরেকটা ইস্যু বুঝতে হবে যে এই একক সেক্টরের সাথে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ইনক্লুডড নয়। দেশের গ্রোথটাকে লিড দিচ্ছে প্রবাসী আয় এবং টেক্সটাইল মিলস।
আর সরকারি ব্যয় এর বিশাল অংশ চলে যাচ্ছে অব কাঠামোগত উন্নয়নে ও সরকার পরিচালনায়। এতে কন্সট্রাকশন আর ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর আর সরকারি আমলারা বুস্ট পাচ্ছে শুধু। মানে বিদেশে যাদের পরিবারের সদস্য নেই আর গার্মেন্টস বিজনেসে যারা নেই বা সরকারি চাকুরী যাদের নেই তারা উন্নতির সম্ভবনা দেখা দিলেও অদূর ভবিষ্যতে দেখা দিবে এখনই নয়।এই তিনটি সেক্টর বাদ দিলে এই তিনটি সেক্টর ছাড়া বাংলাদেশের বিশাল মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী এখনো প্রত্যক্ষ উন্নয়নের বাইরে। মানে যেসব লাখ লাখ তরুন দেশেই বসে দেশের উন্নয়নে ভুমিকা রাখার স্বপ্ন দেখে তাদের জন্য ইতিমধ্যে ভালো কোনো সুখবর নেই।ভারত পাকিস্তানকে জিডিপির নিরিখে পিছিয়ে দেয়ার কারণে তৃপ্তির ঢেকুরে ঢোকা যাচ্ছেনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আমার জানামতে এই দুই দেশের উন্নয়নের মডেল কেউ ফলোও করেনা। মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি গুলো ইন্ডিয়া , পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতন দেশে গুলোয় আসে মধ্যবিত্তদের বেসিক ডিমান্ড নিয়ে বিজনেস করার জন্য।
এই GDP per capita এর তৃপ্তির ঢেকুর তূলা কি জায়েজ নাকি নাজায়েজ ? আমেরিকার GDP per capita হচ্ছে ৬০ হাজার ডলার আর ব্রিটেনের GDP per capita হচ্ছে ৪৫ হাজার ডলার। মাঝখানে ১৫ হাজার ডলার এর তফাৎ। কেউ কি দেখেছে যে আমেরিকার CNN BBC কে বলছে তোরা ব্রিটিশরাতো ফকিন্নির জাত। কিন্তু আমাদের দেশে গুলোয় এই ইস্যুটা কমন। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত পাকিস্তানের থেকে আমাদের মাথাপিছু আয় যথাক্রমে মাত্র ১৫০ ও ৭৫০ ডলার বেশী । তাহলে কেন আমরা নাচানাচি করছি ? কেন আমরা বার বার ওদের সাথে তুলনা করে নিজেদের জাহির করতে চাচ্ছি। এখনও আমাদের অনেক দূর যাওয়া বাকি।
ইন্দোনেশিয়া মালেশিয়া ভিয়েতনামের মতন দেশ যেখানে ২৫০ বিলিয়ন ডলার এর বেশী এক্সপোর্ট করে। যেখানে এই দেশগুলোর Trade Deficit positive , রপ্তানি আমদানির চেয়ে ২০ থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার বেশী। সেখানে আমরা মাত্র ৩০-৪০ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট দিয়ে লো স্কিল লো কস্ট শ্রমিক দিয়ে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে এখনই মনোপলি খেলার স্বপ্ন দেখি। ভিয়েতনাম যেখানে ৫-৬ বছর আগে আমাদের থেকে মাত্র ৩০-৪০ বিলিয়ন ডলার এর বড় অর্থনীতি ছিলো আজকে তাদের মার্কেট সাইজ ৫২০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের সুযোগ অন্যরা কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে দিন দিন এদিকে আমাদের অর্থনীতির মেরুদন্ড শক্তিশালী করা বাকি কয়েকটা শক্তিশালী রাষ্ট্রের সাথে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট চ্যালেঞ্জ বাকি। যেখানে FMGC কোম্পানি গুলির প্রোডাক্ট কোয়ালিটি নিয়ে বার বার দেশের মার্কেটেই প্রশ্ন তলা হয় সেখানে আমরা লং টার্মের ইকোনমিক সাস্টেইবল গ্রোথ এর স্বপ্ন কিভাবে দেখি ??
ভিয়েতনাম মডেল কি কার্যকরী না মালয়েশিয়ান মডেল নাকি কোনটা আমাদের জন্য ব্যাটার ? এইটা চিন্তা করার আগে আমাদের ইলেক্টনিক্স এক্সপোর্ট , সেমিকন্ডাক্টার এক্সপোর্ট , মেশিনারি , স্টিল এগুলোতে কাজ করে দেয়া স্টার্ট করা জরুরী।যেটা আমরা এখনও করছিনা।এখনো মেগা প্রোজেক্ট ও ইকোনমিক জোন গুলোর ডেভেলপমেন্টে শ্লথ গতি আর চাকরীর অভাবে হন্ন হয়ে থাকা তরুনদের হতাশা বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় বাঁধা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন