নরসিংদী প্রতিনিধিঃ নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের তারা মিয়ার ছেলে আবুল কাশেম একজন মস্তিস্ক বিকৃত মানসিক প্রতিবন্ধী। দীর্ঘদিন ধরে শিকল পড়িয়ে বেঁধে রেখেছে তার পরিবার। যাতে করে সে হারিয়ে না যায় এবং মানুষের ক্ষতি না করতে পারে।
চোখের সামনে ছেলের এমন কষ্ট দেখেও অনেকটা বাধ্য হয়ে সব কিছু মেনে নিচ্ছে তার বাবা-মা। জানা যায়, সে প্রায় আট বছর যাবত সে গৃহ হীন, আম গাছের সাথে দুটি হাত লোহার শিকলে বাঁধা অবস্থায় জীবন যাপন করে আসছে। অর্ধউলঙ্গ, বালুমাখা গতর, নোংরা লুঙ্গি, মাথায় দুর্গন্ধযুক্ত চুলে তার অনিদ্রা ও অনাহারেই কাটে দিন রাত।
আমগাছের ছাঁয়ায় তার স্থায়ী বসবাস। প্রখর সূর্য তাপ প্রবল ঝড়বৃষ্টি ও শীতের মাঝেও তার একমাত্র আশ্রয় স্থান হচ্ছে আম গাছ তলা। অপরিচ্ছন্ন সিলভারের একটি বাটিতে ভাত খেয়ে অভ্যস্থ সে। তার হাত মুখ ধোয়ার কোন সুযোগ নেই। গাছের তলায় লোহার শিকলে বাঁধা গোসলবিহীন ও অপরিচ্ছন্ন দিন যাপন করলেও মস্তিষ্ক বিকৃতি ব্যতিত তার অন্য আর কোন রোগ বালাই হয়না। ইচ্ছে হলে পেট ভরে খাবার খায়।
আবার ক্ষুধা পেটেও কেউ খাবা দিলে তা বিড়াল কুকুরকে ডেকে খেতে দিয়ে দেয়। কারো প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা দেখায়, আবার কাউকে পছন্দ না হলে বকাবকি করে দূরে তাড়িয়ে দেয়। স্কুলের মেধাবী ছাত্র ছিল কাসেম। ১৯৯৮ সনে এস,এস, সি পরীক্ষায় ১ম বিভাগে পাশ করে। পিতার স্বপ্ন ছিলো মেধাবী ছাত্র বিধায় কোনরকমে হলেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে এ পুত্র সংসারে একদিন হাল ধরবে। কিন্তু বিধি বাম, কলেজে ভর্তি হবার প্রাক্কালে কাসেমের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে।
বহু বৈদ্য কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করেছেন, কিন্তু কোন ফল হয়নি। কাসেমের মেজাজ কোন অছিলায় খারাপ হলে সে চেনা অচেনা সব মানুষের সাথে মারমুখী আচরণ করে থাকে। কখনো কখনো মারধর ও করে থাকে। এমনি অবস্থায় কাসেম কোথাও কোন অঘটন ঘটাতে পারে বলে অনেকের পরামর্শ সাপেক্ষে শিকল দিয়ে বারান্দায় একটি আম গাছে তার সময় কাটানোর স্থায়ী স্থান করে দিয়য়েছেন তার বাবা মা।
কাসেমের পিতা তারা মিয়া নিম্নআয়ের মানুষ। শ্রমের বিনিময়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করলেও অন্যের কাছে হাত পাতার মন মানুষিকতা নেই তার। তবে যদি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি পাগল কাসেমের প্রতি দয়া করে, চিকিৎসার জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় এবং তার বিনিময়ে কাসেম সুস্থ হয়ে পুনঃ একটি সুন্দর জীবন ফিরে পেতে পারে তাতে কাশেমের বাবা খুশী হবেন, এমনটি বিজ্ঞজনের ধারণা। কিন্তু পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়।
এলেকাবসির আশা কোন রিদয়বান ব্যক্তির সহায়তায় কাসেম তার অতীত জীবন ফিরে পেলে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে মানবতার। ভালো চিকিৎসায় কাসেম ভাল হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। শিবপুর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মাহমুদুর রহমান জানান, কাসেমের চিকিৎসার জন্য তাকে মানসিক ডাক্তার ও হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে। তবে সে প্রতিবন্ধী হলে তার অফিস থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেওয়ার সুযোগ আছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন