‘প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। আমার অনেক শিক্ষা হয়ে গেছে। আমি জীবনে আর কোনওদিন চারুকলা বা অন্য কোনও জায়গার মেয়েকে কোনওদিন কোনওকিছু বলব না। আমি তোমার পা ধরছি। তোমার ভাবির কাছে এটা জানাজানি হয়ে গেলে আমার সোনার সংসার শেষ হয়ে যাবে।’
এভাবেই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক্স ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিন চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি নিপীড়ন নিরোধ সেলে যৌন হয়রানির অভিযোগ জমা দেওয়ার আগে ফোন করে এভাবেই ক্ষমা চান ওই শিক্ষক।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সংক্রান্ত একটি ফোনালাপ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। ২ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের ফোনালাপে ওই শিক্ষকের কথোপকথনের কিছু অংশ বাংলাদেশ প্রতিদিনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। আমার অনেক শিক্ষা হয়ে গেছে। আমি জীবনে আর কোনওদিন চারুকলা বা অন্য কোনো জায়গার মেয়েকে আর কোনওদিন কোনও কিছু বলব না। আমি তোমার পা ধরছি। তোমার ভাবির কাছে এটা জানাজানি হয়ে গেলে আমার সোনার সংসার শেষ হয়ে যাবে। আমি তোমাদের ফেসবুকীয় মেসেঞ্জার নম্বর-টম্বর সমস্ত কিছু ডিলিট করে দিয়েছি। আমি আর কোনওদিন আর যদি কোনও কিছু করি তারপর জানিও।’
কথোপকথনের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্যার (অভিযুক্ত শিক্ষক) আমি আর কাউকে বলব না, আমি ডাইরেক্ট ভিসির কাছে যাব।’
এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে ওই শিক্ষক বলেন, ‘কার কাছে, না না, বললাম তো, তোমার পা ধরছি। সবই বুঝতে পারছি, মা আমি অনেক ভুল করে ফেলছি। মানে ঠিক আছে মা, প্লিজ মা, আমি তোমার পায়ে ধরছি। আমার বহু শিক্ষা হয়ে গেছে, সত্যি বলছি। আমার কয়েক রাত ঘুম নাই, কিচ্ছু নাই। আমার বউয়ের দিকে মুখ তাকাতে পারছি না। আমি একদম শেষ হয়ে যাব, প্লিজ। আমি বলতেছি তো, আমি চারুকলা বা কোথাও কোনও জায়গায় কোনও মেয়েকে কোনওদিন কোনওকিছু বলব না।’
গত বুধবার দুপুরে চারুকলা অনুষদের অন্তর্গত গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন ওই বিভাগের একজন ছাত্রসহ ১৩ জন ছাত্রী। এদিকে, গত শুক্রবার ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নগরীর চন্দ্রিমা থানায় অধ্যাপক আমিরুল মোমেনিনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় মামলা করেছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুম মনির বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
অভিযোগপত্রে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেছেন, ‘অনেক দিন থেকে প্রায় সকল শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ও ক্লাসের বাইরে অশ্লীল ভাষায় কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য এবং মেসেজ ও মেসেঞ্জারে অশ্লীল ছবি, ভিডিও, মেসেজ প্রেরণ করে অসামাজিক কার্যকলাপের আহ্বান জানানো হয়। এসব অশ্লীল বক্তব্যের শিকার হয়ে আমরা মানসিকভাবে হেনস্তার শিকার ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।’
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন, ‘আমি তো অভিযোগটাই দেখিনি। তারা কী অভিযোগ দিয়েছে, কারা করেছে, তাও তো বলছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়ার আগে ফোনালাপের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বলছিলাম, এটা এ রকম কোনও জিনিস না। এরা যে এ রকম করে করবে, সেটাও জানি না। যাই হোক, এটা নিয়ে যখন বলে যে, এটা নিয়ে ভিসির কাছে যাবে, তখন তাৎক্ষণিকভাবে আটকানো দরকার এজন্য এভাবে বলেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো বলছি, আমি কোনও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এটা করিনি। ওরা আমার ফেসবুকে বিভিন্ন ছবি-টবি দেয়। আমার সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষকের পরিচয়, তো বিভিন্ন সময় পেইন্টিংয়ের বিভিন্ন ছবি-টবি দেয়। তো এর মধ্যে দুই-একটি ছবি একটু অন্য রকম থাকে আরকি। আর আমাদের চারুকলার বিষয়ই আরকি। তো এসব নিয়ে ওরা একটু মন খারাপ-টারাপ করছে। তো আমি বলেছি, এ নিয়ে আর কথা-টথা বলো না। এইটুকুই।’
ফোনালাপে একাধিকবার পায়ে ধরার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘না, সেটা না। হয়কি, কোনও মেয়ে যদি বলে এক্ষুণি আমি ভিসির কাছে অভিযোগ দেব, তখন একটু মন-টন খারাপ হয়ে যায়।’
এ বিষয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্ধার্থ শঙ্কর তালুকদার বলেন, ‘তার কাছে কোনও শিক্ষার্থী এ ধরনের অভিযোগ করেনি। যেহেতু একটি সেল আছে, তাই তারা হয়তো সেখানে অভিযোগ দিয়েছে। আশা করি, ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসবে।’
বিডিটাইপ সংবাদের লেখক হতে পারেন আপনিও। আপনার আশপাশে ঘটে যাওয়া যেকোনো ঘটনা, ভ্রমণ অভিজ্ঞতা, ক্যাম্পাসের খবর, তথ্যপ্রযুক্তি, বিনোদন, শিল্প-সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে লেখা পাঠান: bdtype@gmail.com ই-মেইলে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন