সারা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পালন করছে সিরাম সাধনার মাস রমজান। সারাদিনের রোজা শেষে সবারই প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠে ইফতার। তবে স্থানের পার্থক্যের কারণে কেউ ১১ ঘণ্টায় রোজা শেষ করছে, কেউ আবার ২২ ঘণ্টাও রাখছে। যে যতক্ষণ রাখুক না কেন, ইফতার কিন্তু সবাই করে। শুধু তাই নয়, ইফতার নিয়ে থাকে ব্যাপক ধরনের উৎসব।
অটোমান সাম্রাজ্যের দেশ তুরস্ক। ঐতিহাসিকভাবে তুর্কি সাম্রাজ্য বা অটোমান সম্রাজ্য ছিল একটি ইসলামি সাম্রাজ্য।রমজান মাসে তুরস্কের পরিবারগুলোর সদস্যরা সবাই একসাথে মিলিত হন। এ মাস উপলক্ষেই তাঁরা খাবারের জন্য একটু বেশি সময় কাটান। রোজা উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করার যেমন সুযোগ হয়, তেমনি দারুণ মজার সব খাবারেরও স্বাদ নেওয়া হয়।
সবেবরাতের পর থেকে তুরস্কে শুরু হয়ে যায় মাহে রমজানের আমেজ। রমজান মাসকে সুগার বিস্ট, সেকের বেরামি বলে টার্কিশরা। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারি থেকে শুরু করে রাতের খাবার পর্যন্ত চলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে ঐতিহ্যবাহী সব খাবার খান তুরস্কবাসীরা।তাজা পাউরুটি, তাজা খেজুর, কালো এবং সবুজ জলপাই, তার্কিশ সাদা পনির, তাজা কাসার পনির, পুরনো কাসার পনির, মশলাদার গরুর মাংসের পাতলা স্লাইস, মসলাদার সসেজ, মিষ্টি মাখন, ফল, মধু, প্রচুর পরিমাণে টমেটো ও শশা। সেহেরিকে তুর্কি ভাষায় বলে সাহুর। সুবেহ সাদেকের আগে আহারে আগে পুডিং জাতীয় খাবার কাজানদেবি, কাশকা ভাল পনির, একটি মাংস, সবজি জাতীয় খাবার রাখেন। বাদ যায়না পিলাপ বা লুডুলস জাতীয় খাবারও। তবে সব খাবারে লবন কম হওয়া চায়। তাদের মতে খাদ্যে কম লবন হলে পিপাসা কম লাগে।
অনেকেই হয়তো জানেনা কাবাবের আদিবাড়ী তুরস্ক। তাই তুর্কিরা তাদের ইফতারের প্রধান তালিকায় রাখেন হরেক জাতীয় কাবাব। শরবতের উপস্থিতিও উল্লেখ করার মতো। ইফতারের পর রাতের খাবারেও চলে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী খাবারের ধারাবাহিকতা। এই তালিকায় থাকে কাজু তান্দির বা তন্দুর করা ভেড়ার মাংস, হানকার বেগেন্ডি, মানতি বা তুর্কির বিশেষ প্রক্রিয়ার রান্না করা ডাম্পলিংস, বাকালাভা। সঙ্গে থাকে নোনতা স্বাদের দই দিয়ে তৈরি পাণীয় আয়রান, শরবত, বিভিন্ন রকম ফলের রস। ঈদের আগে নতুন পোশাক পড়ার আড়ম্বর শুরু হয়ে যায় তাদের। রমজানে প্রথম দিন তারা পরিধান করেন সামথ্য অনুযায়ী নতুন কাপড় আর সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি।
এই পোশাক পড়ার রেওয়াজকে বেরামলিক নামে সম্বোধন করা হয়। মাহে রমজানকে কেন্দ্র করে তুরস্কে কেনা বেচার মাত্রা বহুগুণ বেড়ে যায়। তবে, দিনের বেলা পযটন এলাকা ছাড়া, অধিকাংশ খাবার হোটেলও রেস্তোরা বন্ধই থাকে বলা চলে। শ্রমিক মালিকের সম্পর্ক যাই থাকুক না কেন, এই মাসটিতে অন্তত সবাই এক কাতারে ইফতার আয়োজনে অংশ নেয়। পবিত্র এই মাসটিতে বিশেষ রমজান মেলার আয়োজন করে দেশটির সরকার। দরিদ্রের জন্য বিনামূল্যে ভাত ও মাংসের ব্যবস্থা করা হয় এই মেলায়। এছাড়া শিশুদের জন্য থাকে চোখ ধাধানো সব আয়োজন।
রাতের খাবারের পর লোকজন সান্ধ্য আয়োজন উপভোগের পাশাপাশি বিভিন্ন ইসলামিক জলসায় যোগ দেন। মসজিদ, প্রধান সড়কের পাশে বড় বড় মসজিদগুলোকে আর্কষনীয় করে সাজানো হয় মাহে রমজানে। অন্য সময়ের তুলনায় কোরান নাজিল হওয়ার এই মাসে তুরস্কের মসজিদগুলোতে মুসল্লিদের ভীড় বেশি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া তুরস্কের রমজানে ইফতার মেন্যুতে রেস্তোরাগুলোতে থাকে বিশেষ আয়োজন সেটি শুধুমাত্র মুসলমান রোজাদারদের জন্য নয়, অমুসলিম কিংবা রোজা না রাখা মানুষদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। মহামান্বিত মাহে রমজান মাসকে নিয়ে তুরস্কে থাকে সাজ সাজ রব।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন