নৈহাটি ইউনিয়নের কর্ণপুর মোড় নামক স্থানে মিরাজ শেখ নামক এক ব্যক্তির বাড়ি ভাড়া নিয়ে কয়েকমাস ধরে চালিয়ে আসছে তার অবৈধ্য ক্লিনিক ব্যবসাটি। এই কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা ধরনের অভিযোগ। এছাড়া অপারেশন করতে গিয়ে অকালে জীবন দিতে হয়েছে অনেকরই কথিত এই কামরুজ্জামানের হাতে। ২৫ আগস্ট সকালে র্যাব-৬ এর অভিযানে গ্রেপ্তার হয় এ ভূয়া চিকিৎসক কামরুজ্জামান।
সুত্রে জানা যায়, এ কামরুজ্জামান নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভুল বুঝিয়ে চালিয়ে আসছিল তার রমরমা চিকিৎসা বাণিজ্য। বিএন, ডিসির রেজিস্ট্রেশন না থাকা সত্ত্বেও সে নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। এমনকি আরাফাত হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঝুলিয়ে রেখেছেন কম্পিউটারাইস ভুয়া সনদ পত্র। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ক্লিনিকটি চালু করে ইচ্ছামত নিয়মকানুন তৈরি করে কিছু অসাধু ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে তারা এ অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই নিয়মিত রোগী দেখা থেকে শুরু করে জটিল অপারেশন পর্যন্ত করা হত এ আরাফাত ক্লিনিকে। যার কারনে কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজন হতনা। তার সাথে ছিল কয়েকজন এ্যসিস্ট্যান্ট যারা কিনা জীবনে মেডিকেলের কোন যন্ত্রপাতি হাতে নেওয়া তো দূরের কথা চোখেও দেখিনি। ছিলনা ডিপ্লোমা নার্স কম বেতনের অনভিজ্ঞ নার্স আয়ারাই এ অবৈধ ক্লিনিকের ছিলো একমাত্র ভরসা। প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় ও হতদরিদ্র মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য এসে অপচিকিৎসার জালে আটকা পড়ে৷ এমনকি অসহায় রুগীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের রোগের নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন অভিযোগও রয়েছে এই ভুয়া ডাক্তার কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বসা এবং অপারেশন করার কথা থাকলেও কখনো কোন ডাক্তার ওই ক্লিনিকে যেত না। কথিত ডাক্তার কামরুজ্জামান সব করত এবং হাসপাতালের ছাড়পত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নাম লিখে হাসপাতালের ওয়ালে লিখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রেখে এ অপচিকিৎসায় লিপ্ত ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা র্যাব-৬ বুধবার সকালে অভিযান চালিয়ে উক্ত ভুয়া ডাক্তার কামরুজ্জামান কে গ্রেফতার করে। এসময় তাকে ১লাখ টাকা জরিমানা ও ১বছর ১০মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। সেই সাথে তার অপর সহযোগী আলম মোড়ল ১০ হাজার এবং আব্দুর রহমানকে ১০ হাজার করে মোট এক লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, র্যাব-৬ এর সিও, মোস্তাক আহমেদ, খুলনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গালিব আহমেদ পাশা ও ডাক্তার সাবরিনা রহমান সহ আরো অন্যান্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা। র্যাব-৬ এর সিও ল্যাপটেন্যান্ট কর্ণেল মোস্তাক আহমেদ সাংবাদিকদের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, একজন ভুয়া ডাক্তারকে আটক করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তাদের তত্বাবধানে আমাদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে।
এদিকে রূপসার জয়পুর এলাকার এক অসহায় রুগী হাফিজা বেগমের স্বামী দিনমজুর মো. জুয়েল শেখ বলেন, এই কামরুজ্জামান ভুয়া ডাক্তার আমার স্ত্রী'র জরআয়ূ নাড়ি অপারেশন করে। পরে জানতে পারি ভুল চিকিৎসা করে কিডনির নাড়ি বেধে অপারেশন করেছেন। এমনকি ভুল অপারেশনের কারনে আমার স্ত্রীর একটা কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আমার স্ত্রী আর মনে হয় বাজবে না, এই বলে হাও মাও করে কাদতে থাকে। ভুক্তভোগী জুয়েল আরো বলেন, আমি ৩টি সমিতি থেকে টাকা উত্তোলন করে আমার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তাকে আড়াই লাখ টাকার মত দিয়েছি। আমার এখন আর কিছু নেই। আমি ভুয়া ডাক্তারের শাস্তি দাবী করি। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা এই ভুয়া ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এবং অবৈধ ক্লিনিক যাতে পুনরায় চালু না হয় সেই দাবি জানিয়েছেন। এর আগে ভুয়া ডাক্তার কামরুজ্জামান নগরীর লবন চোরাস্থ এলাকায় ভবন ভাড়া নিয়ে আরাফাত ক্লিনিক করে একই ভাবে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলো। হটাৎ একদিন কামরুজ্জামানের ভুল চিকিৎসার কারনে রোগী মারা যায়। এতে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে ওই ক্লিনিক সিল গালা করা হলে এবং ওই এলাকার সাধারণ মানুষের ভয়ে ভুয়া ডাক্তার কামরুজ্জামান এলাকা ছেড়ে রূপসায় এসে একইনামে ক্লিনিকের ব্যবসা করে আসছিলো। এছাড়াও সে ড্যাপস হসপিটালে এক সময় চিকিৎসা করতো। তবে তার ভুয়া ডাক্তার প্রমানিত হওয়ার পর থেকে তাকে উক্ত ড্যাপস হাসপাতাল থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয় বলে জানাযায়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন