সুযোগ পেলেই চাল-ভোজ্য তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা বেশকিছু অজুহাতে এসব নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। অজুহাতগুলোর মধ্যে রয়েছে—সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা, পরিবহন খরচ, মিল মালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে কেনা ও বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়া।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি চালের আড়ৎ ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা। এসব চাল আসে কুষ্টিয়া, নওগাঁ, চাপাই, বগুড়া আর দিনাজপুরের মিল থেকে। বর্তমানে নাজিরশাইল কেজি ৬৮-৭০ টাকা, পাইজাম ৪৮-৫০টাকা, মিনিকেট ৬২-৬৪টাকা ও আটাশ ৫৩-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভারতীয় চালের আমদানি সংকট, মিল মালিকদের কারসাজি ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম হুটহাট করে বাড়ছে বলে জানান, কারওয়ান বাজারের 'আল্লাহর দান রাইছ' এর মালিক, পাইকারী চাল ব্যবসায়ী আব্দুল আউয়াল তালুকদার।
রবিবার (৭ মার্চ) কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, নিউমার্কেট সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে—কোম্পানি ভেদে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও কোম্পানি ভেদে বিক্রি হয়েছে ১ লিটার ১১৫-১২০ টাকা, ২ লিটার ২৩০-২৪০ টাকা ও ৫ লিটার ৬১০-৬২০ টাকা। অথচ (৫ মার্চ) নিউমার্কেটে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৩৫-১৪০ টাকা, ২ লিটার ২৬০-২৭০ টাকা ও ৫ লিটার ৬২০-৬৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি বাজারের চেয়ে খুচরা বাজারে একই তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা থেকে ৫০টাকা পর্যন্ত বেশি দামে। এই বিষয়ে কারওয়ান বাজারের তেলের পাইকারি ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, ‘কোম্পানি থেকে যেই দামে তেল কিনেছি, তার চেয়ে সামান্য বেশি দামে বিক্রি করছি।অথচ খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক বেশি দামে বিক্রি করছেন।’ তিনি বলেন, ‘সয়াবিন তেলের বাজারে গত দুই সপ্তাহ ধরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। সরকারিভাবে গত সপ্তাহে তেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও কেউ তা মানছে না।
কারওয়ান বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বলেন, ‘সব তেল কোম্পানি এক জোট হয়ে বিভিন্ন অজুহাতে তেলের মূল্য বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলেন। এরপর কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
বেশি দামে ভোক্তাদের কাছে তেল বিক্রির জন্য পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা দোকানিদের দায়ী করেন। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ১ লিটার ১৩৫ টাকা, ২ লিটার ২৭০ টাকা ও ৫ লিটার ৬৩০ টাকায় বিক্রি করছেন।
সয়াবিন তেলের বাজারে অস্থিরতা ও দাম বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন বলেন, ‘তেল মালিকরা যদি কম দামে তেল বাজারে না ছাড়েন, তাহলে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই। তারা চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম করেন। এই কারণে এতে দাম বেড়ে যায়। এজন্য বেশি ভোগান্তি হয় নির্দিষ্ট আয়ের সাধারণ জনগণের। এই দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতা বন্ধ করতে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাজারে তেলের দামের এই ওঠা-নামা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বৃহৎ তেল আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন,‘ কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি। গত বছরের অক্টোবরে প্রতিটন সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৭০০ থেকে ৭৫০ মার্কিন ডলার। পরে তা বেড়ে বিক্রি হয় এক হাজার ৯০ থেকে এক হাজার ১০০ ডলারে। এ অবস্থায় আমরা আমদানি কমিয়ে দিয়েছি।যার ফলে বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট দেখা গিয়েছে। তাই দামও বেড়ে গেছে।
রাজধানীর মৌলভীবাজারের একাধিক পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জানান, বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা বেশি।কিন্তু বিভিন্ন কোম্পানির মিলে ভোজ্যতেলের বিক্রয় আদেশ জমা দেওয়ার পর, সেই সরবরাহ দিতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ দিন সময় নিচ্ছে তারা। এর মধ্যেই বাজারে তেলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তাই দামও বেড়ে গেছে।
কোম্পানিগুলো কেবল নিজেদের লাভের কথা-ই ভাবেন বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুগ্ম সচিব। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন অজুহাতে তারা চাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দেন। সরকারিভাবে সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল মজুদ থাকার পরও মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সব ধরনের চালের দামও ক’দিন পর পর বাড়ে। ’ তবে, সরকারের পক্ষ থেকে নিবিড়ভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন