কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সিটে বসাকে কেন্দ্র করে ঝগড়ার জেরে ছাত্রলীগের দু'পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে হোসেনপুর পৌরসভার কোর্ট মসজিদ এলাকায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দু'পক্ষ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আহতদের কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। সংঘর্ষের সময় ওই এলাকার একটি দোকান ও তিনটি বাসা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ সময় তাদের বাসাবাড়িতে লুটপাটও করা হয়। জানা গেছে, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মুখলেছ ও আরেক সভাপতি প্রার্থী ইয়াসির আরাফাত শুভ তাদের সমর্থকদের নিয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়।
মারামারিতে প্রথমজন ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হন। দ্বিতীয়জনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকালে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত অনুষ্ঠানে সিটে বসা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। পরে দুপুরে দিকে দুপক্ষের কয়েক শ সমর্থক লাঠিসোঁটা, রামদা, বল্লমসহ নানা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল পরস্পরের দিকে নিক্ষিপ্ত হয়।
তখন ওই এলাকার একটি দোকান ও তিনটি বাসা হামলা এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত দুপক্ষের অর্ধশতাধিক কর্মী আহত হয়। এ সময় পুরো বাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে ফেলে। গুরুতর আহতরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান মুখলেছ, আল আমিন অপু, ইয়াসির আরাফাত শুভ, আকাশ, রিফাত, সাদ্দাম, হৃদয়, মাসুম ও রানা।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাবেয়া খাতুন, ওসি মাসুদ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তাঁরা দুজনেই এ সময় বাড়িঘর ও একটি দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার মাথা ফেটে গেছে।
আমি চিকিৎসা নিয়ে এখন বাসায় রয়েছি। ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখি মারামারি হচ্ছে। তখন কিছুদূর যেতেই আমার মাথায় ইটের আঘাত লাগে। কেন মারামারি হলো? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি জানি না, কেন মারামারিটা হয়েছে। আমি মারামারি দেখে দুপক্ষকে নিবৃত্ত করতে এগিয়ে গিয়েছিলাম। পরে আমার মাথা ফেটে যাওয়ায় এলাকাবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওদের ধাওয়া দেয়।
বিষয়টি জানতে তার প্রতিপক্ষ ইয়াসির আরাফাত শুভকে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি। সংঘর্ষে গুরুতর আহত উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল আমিন অপু বলেন, দুপক্ষই আমার। আমি ভেবেছিলাম আমি গেলে ওরা থামবে। কিন্তু আমাকে একপক্ষ নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করেছে। মাথায় বেশকিছু সেলাই পড়েছে। ঠিক কেন ঝগড়াটা হলো আমিও ঠিক বলতে পারব না।
তবে ছাত্রলীগের কয়েকজন জানান, মূলত এটি ছিল দুপক্ষের শক্তির মহড়া। কার কত শক্তি রয়েছে, তা দেখানো। নইলে সামান্য ঘটনা নিয়ে এত বড় মারামারি হওয়ার কথা না। তারা জানায়, গত এক সপ্তাহ আগে এই দুই গ্রুপই একই কায়দায় আবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিল।
তখনও অনেকে আহত হয়। হোসেনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি দুপক্ষের সংঘর্ষের কথা নিশ্চিত করে জানান, কেন মারামারি হয়েছে, তা পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ বা বাড়িঘরের মালিকরা থানায় অভিযোগ দিতে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন