শরীয়তপুর জেলা জজ আদালতের সাবেক পিপি (সরকারি কৌঁসুলি) হাবিবুর রহমান ও তাঁর ভাই মনির হোসেন হত্যা মামলার রায় প্রত্যাখান করে তাদের স্বজনদের বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ ও হরতালের পর মঙ্গলবার আদালত বর্জন করেছেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার সকালে জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভা শেষে আদালত বর্জনের ঘোষনা দেয়া হয়।
২০০১ সালে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের ঘটনায় রোববার ওই মামলার রায় ঘোষনা করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইন। রায়ে সংক্ষুব্দ হয়ে শরীয়তপুরে কর্মরত আইনজীবীরা ওই বিচারকের প্রত্যাহার দাবী করেছেন। তাকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত বর্জনের ঘোষনাও দেয়া হয়েছে। আর ২৩ মার্চ মঙ্গলবার সকল আদালতে কর্মবিরতি পালন করেছেন আইনজীবীরা।
ওই হত্যা মামলার ৫২ আসামীর মধ্যে ১৩ আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড দিয়েছেন আদালত। আর বাকিদের বেকসুর খালাস দেয়া হয়।
রায় ঘোষনার পর রোববার হাবিবুর রহমানের ছেলে পারভেজ রহমানের সমর্থকরা সড়ক অবরোধ করেন। সোমবার শহরে আধাবেলা হরতাল করা হয়।
মঙ্গলবার আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে আইনজীবীরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেন। প্রভাবিত হয়ে রায় দেয়া হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. শওকত হোসাইনের প্রত্যাহার দাবী করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বলেন, এ রায় নিয়ে আমাদের আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ ও দুঃখ রয়েছে। এ কারণে আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার সকল কোট ও রায় প্রদানকারী বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের আদালত স্থায়ী ভাবে বর্জন করার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।
হাবিবুর রহমানের ছেলে পৌর মেয়র পারভেজ রহমান বলেন, আমার বাবা ও চাচাকে আমাদের সামনে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কারা এ ঘটনায় জরিত তা আমরা দেখেছি। হত্যা মামলার রায়টি আমরা মানতে পারিনি। আসামীদের পক্ষে প্রভাবিত হয়ে এমন একটি রায় দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর জজ কোটের পিপি মির্জা মো. হযরত আলী বলেন, আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার সকল আদালতে কর্মবিরতি পালন করা হয়েছে। আর অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত বর্জন করা হয়েছে। এ বিষয়ের কোন লিখিত সিদ্ধান্ত আদালতে পৌঁছেনি।
২০০১ সালের ৫ অক্টোবর ঘটে যাওয়া ওই হত্যাকান্ডের মামলায় ৫২ আসামীর মধ্যে ১৩ আসামীকে বিভিন্ন মেয়াদে দন্ড দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে ছয় ব্যক্তিকে মৃত্য্যুদন্ড, চার ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন ও তিন ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর এ মামলার ৩৯ আসামীকে খালাস দেয়া হয়েছে। দন্ড প্রাপ্ত পাঁচ জন আসামী পলাতক রয়েছেন।
মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা হলেন শহীদ কোতোয়াল, শাহিন কোতোয়াল, শফিক কোতোয়াল, শহীদ তালুকদার, সলেমান সরদার ও মজিবর রহমান তালুকদার। শহীদ কোতোয়াল, শাহীন ও শফিক আপন ভাই। তাদের বাড়ি পৌরসভার হুগলি এলাকায়।
আর সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার, ডাব্লু তালুকদার, বাবুল খান, আব্দুর রশিদ ওরফে টোকাই রশিদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর মন্টু তালুকদার, আসলাম সরদার ও জাকির হোসেন মজনুকে দুই বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত।
বাবুল তালুকদার ঘটনার সময় যুবলীগের কেন্দ্রিয় নেতা ছিলেন। আর বাবুল খান তখন জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। দন্ড প্রাপ্ত শহীদ তালুকদার, ডাব্লু তালুকদার ও মন্টু তালুকদার বাবুল তালুকদারের ভাই। তাদের বাড়ি পৌর এলাকার স্বর্ণঘোষ এলাকায়। ডাব্লু তালুকদার পৌরসভা আওয়ামী লীগের সদস্য।
আসামীদের মধ্যে মৃত্যদন্ড প্রাপ্ত শহীদ তালুকদার, শাহীন কোতোয়াল, যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত বাবুল তালুকদার, আব্দুর রশিদ ও দুই বছর কারাদন্ড প্রাপ্ত জাকির হোসেন মজনু পলাতক রয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন