মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নে মোহাম্মদ শাহ ঘোনার (৭নং ওয়ার্ড) এর পশ্চিম পাশে 'ঘাটকুল'। ঘাটকুল মূলত বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা ত্রিমুখী উন্নয়ন প্রাণ কেন্দ্র। এই ঘাটকুলকে ফিশারি ঘাট করার জন্য দাবী জানিয়েছেন স্হানীয় ট্রলার মালিক সমিতি ও জেলেরা।
'ঘাটকুল' একদিকে দ্বীপ ইউনিয়ন ধলঘাটা এর যাতায়াত অন্যদিকে পরিচিতি পেয়েছে বঙ্গোপসাগর থেকে জেলেরা ট্রলারে করে মাছ খালাসের নিরাপদ স্থানের জন্য। চিংড়ি ঘের,লবণের মাঠের যাতায়াতও এটি। আবার শত বছর ধরে কোহেলিয়া নদীযোগে এই ঘাটে চট্টগ্রাম থেকে পন্য আনা নেওয়া করতো সমগ্র মহেশখালীতে। তখন এই ঘাটকুল এর অনেক কদর ও ব্যস্তময় ছিলো। বর্তমান সড়ক পথে চট্টগ্রাম থেকে পন্য আনা নেওয়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই 'ঘাটকুল' এর চাহিদা দিন দিন হ্রাস পায়। কিন্তু জেলেরা তাদের শতবছর এর ঘাটকে এখনোও আঁকড়ে ধরে রেখেছে, মানুষের শোরগোল ধরে রেখেছে।
জেলেদের হাক ডাকে মুখর এই ঘাট। সকালে ট্রলার ভর্তি করে মাছ নিয়ে 'ঘাটকুল' এ ফিরেন জেলেরা। ঘাটকুলে গিয়ে দেখা যায়, ট্রলার ভর্তি মাছ নিয়ে পাড়ে ভিড়ছে জেলেরা। মাছ ভর্তি ট্রলার পাড়ে ভিড়লে শুরু হয় জেলেদের হাঁক ডাক। শুরু হয় কেনাবেচা।
জেলেদের ব্যস্ততাও বেড়ে যায়। কাঠের শক্ত টুকরা দিয়ে ভাঙছে বরফের চাঁই। ভোর ৫টায় ঘাটের আর কোনো জায়গা এত সরগরম থাকে বলে আমার জানা নেই। এখানকার প্রধান চরিত্র মাছ। সামুদ্রিক মাছ বললে বুঝি বেশি ভালো। মাছ ঘিরে জড়ো হয় ক্রেতা, বিক্রেতা, শ্রমিক, মুটে, চা ওয়ালা, পান ওয়ালা এবং আরো অনেক রকমের মানুষ। কিছু আড়ত ও অল্প দোকান আছে।আড়তগুলোর মাঝের খোলা চত্বরে অধিকাংশ মাছ কেনাবেচা হয়।
শহিদুল্লাহ মাঝি বলেন 'ঘাটকুল' এর আড়ত ও দোকানগুলোতে মাছ মেলে ৯০ ভাগ। যা অন্য ঘাটে সহজে মেলেনা। কারণ এ ঘাটে সরাসরি ট্রলার করে মাছ আনতে পারে। এমনকি এ ঘাট থেকে মাছ সরবরাহ করা হয় দেশের চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন শহরগুলোতে। দুটি ছোটো ছোটো জেটি আছে ঘাটের। তাই এই 'ঘাটকুল'কে একটি বৃহৎ ফিশারি ঘাটে রুপান্তর করলে আরও অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এতে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। ফিরে পাবে পুরনো ঐতিহ্য।
এই 'ঘাটকুল'কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বরফকল ও কোল্ড স্টোরেজ। খাবারের হোটেলও আছে কয়েকটি। প্রায় দশ হাজার মানুষের জীবিকা জড়িয়ে আছে এই ঘাটের সঙ্গে।'ঘাটকুল'এ প্রায় ১ হাজার ফিশিং বোট ও কয়েক'শ ট্রলারের আহরিত মাছ বিক্রি হয়। এখানে পাবেন লইট্যা, ফাইস্যা, কোরাল, বাটা, লাক্ষ্যা, সুরমা, তাইল্লা, মাইট্টা, চেউয়া, চিড়িং, শাপলাপাতা, ছুরি, পোয়া, চান্দা, চিংড়ি, আইল (বুলেট), বড় বড় গাঙ কই, মোছ কেডা, কেচকি, বোম, বাইন, বাইলা, হোন্দরা বাইলা, যাত্রিক, চাপিলা, ইলিশ, হাঙর, কাপিলাসহ আরো অনেক মাছ। কোনো মাছের ওজন ৫০ গ্রাম, কোনোটির বা ২০ কেজি। সব মাছ সব সময় পাওয়া না গেলেও লইট্যা, চিংড়ি, বাটা এবং কোরাল সব সময়ই পাওয়া যায়। মিঠা পানির মাছও ওঠে প্রচুর।
মোহাম্মামদ হোসেন মাঝি বলেন, এই ঘাটকুলে সব ধরনের মাছ পাওয়া যায়। এখান থেকে মাছ শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়। সকাল থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতার আনাগোনা বেড়ে যায়। এই ঘাটে দৈনিক ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার ব্যবসা বাণিজ্য হয়। এই ঘাটে জড়িত থেকে অনেক জেলে বা ব্যবসায়ীরা জীবিকা নির্বাহ করে। ভবিষ্যতে এই ঘাটকুলে একটি স্হায়ী ফিশারি ঘাট করলে আরও মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাই আমাদের সময়ের দাবী ঘাটকুলে একটি স্হায়ী ফিশারি ঘাট করার।
স্হানীয় চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীপ বলেন, এই ঘাটকুলে আমার শৈশব জড়িত। ছোটকাল থেকে দেখে আসছি এই ঘাটের আনাগোনা। এখানে নিয়মিত ট্রলার ভিড়ে মাছ খালাস করে। মাছ কেনাবেচা হয়।দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে মাছ কেনার জন্য। তাই এই ঘাটকে স্হায়ী ফিশারি ঘাট করতে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। আমি এই ঘাটকুলকে ফিশারি ঘাটে রুপান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলবো।
স্হানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা চাই এই ঘাটকুলকে ফিশারি ঘাট করা হোক। ফিশারি ঘাট হলে মাছ কেনাবেচা আরও বৃদ্ধি পাবে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। জেলেদের মাছ খালাস করতে আরও উৎসাহ বেড়ে যাবে। আর মাছ খালাস করতে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে যেতে হবেনা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন