সমুদ্রের নীল জলরাশির ঢেউয়ের গর্জন আর বাতাসে ঝাউবনের শাঁ শাঁ শব্দ যেখানে একাকার হয় নির্জন দ্বীপে খেলা করে সেই নির্জন দ্বীপ সোনাদিয়ায় বসেছে মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের মিলন মেলা। গত ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার ও শনিবার) দুইদিন ব্যাপী পিকনিক ও মিলনমেলা মহেশখালী উপজেলা প্রেসক্লাবের একঝাঁক সাংবাদিক সোনাদিয়ার অমলিন সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সুশৃঙ্খল সুন্দর আলোচনার মাধ্যমে শেষ করেছে।
শুক্রবার সকাল ১০ টায় ঘটিভাঙ্গা ঘাট হতে নদীর বুকে কাঠের বোট চলেছিলো একঝাঁক সাংবাদিক, লেখক ও কবি সাহিত্যিক নিয়ে। বোট চলছে আর দুই পাশের কেওড়া বনে দোল দিচ্ছে ঢেউ । মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ঘন্টাখানেকের মধ্যে সোনাদিয়ায় পৌছে যায়। তাঁবু একটুখানি রেস্ট, জুমার নামাজ পরে শেষ হয় দুপুরের খাবার। এরপরই শুরু হয় আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণী সভা।
বিকেল ২টার দিকে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আ ন ম হাসানের সঞ্চালনায় ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জে এইচ এম ইউনুসের সভাপতিত্বে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহেশখালী উপজেলা নির্বাচন অফিসার বিমলেন্দু কিশোর পাল, মহেশখালী থানার এসআই ফরাজুল ইসলাম,সাংবাদিক হারুনুর রশিদ, সাংবাদিক ও লেখক জাহেদ সরওয়ার, সাংবাদিক শাহাবুদ্দিন সহ আরো অনেকে।
এছাড়াও সভায় উপজেলা প্রেসক্লাব ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ সংবাদ সংগ্রাহক,সর্বোচ্চ অনুসন্ধানী সংবাদ সংগ্রহ ও কর্মস্থলে সফলতা এই তিন ক্যাটাগরিতে তিনটি পুরস্কার প্রদান করেন। এতে কর্মস্থলে সফলতার জন্য জনকণ্ঠের মহেশখালী প্রতিনিধি ফারুক ইকবাল, সর্বোচ্চ সংবাদ সংগ্রহের জন্য দৈনিক শেয়ার বীজের কক্সবাজার প্রতিনিধি এস এম রুবেল ও দ্য টেরিটোরিয়্যাল নিউজ (টিটিএন)'র রিপোর্টার সাইফুল আফ্রিদিকে সর্বোচ্চ অনুসন্ধানী সংবাদ সংগ্রহের ক্রেস্ট প্রদান করেন।
সভা ও পুরস্কার বিতরণ শেষে পূর্বনির্ধারিত শিডিউল অনুসারে ফটোশেসন এবং বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। এতে জোড় আর বিজোড় দুই দল ফুটবল খেলতে নামে। তবে দুই দলই কোন গোল করতে না পেরে জয়ের স্বাদ ছাড়াই খেলা শেষ করেছে।
বিকেলের খেলা শেষে সূর্যের লাল রঙের আভা ছড়িয়ে পড়ছে দ্বীপে। সাগরের মাছ ধরাট জেলেদের নৌকায় জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠছে কুপিবাতি। নেমে এলো সন্ধ্যা। আঁধার ঘেরা সন্ধ্যাকে নেচে গেয়ে উপভোগ করে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় রূপায়িত করে সকলেই। এতে কবি লেখক ও সাংবাদিকরা কবিতা ও গান গেয়ে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করেন। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা শেষেই বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করা হয়।
বারবিকিউ শেষে প্রত্যেকে যার যার মতো সময় কাটানো শেষে রাতের ডিনারের জন্য প্রস্তুতি নেয়। রাত সাড়ে ১১ টা ডিনার শেষ করে সবাই সোনাদিয়ার ঝাউবনের কোমল বালিতে তাঁবু ক্যাম্পেইন করে রাত্রি যাপন করে। পরদিন শনিবার কাক ডাকা ভোরে ঘুম ভাঙে সবার। সূর্যের আলো টিকরে পড়ছে ঝাউগাছের ফাঁকে ফাঁকে, সাগরের গর্জন আর বাতাসের শাঁ শাঁ শব্দে সকালের নির্মল বাতাসে ছড়িয়েছে গরম খিচুড়ির হাড়ির ম-ম গন্ধ।
সকলেই সকালের খাবার খেয়ে আবারো এদিক সেদিক দিকবেদিক ছোটাছুটি করা লাল কাঁকড়ার দলবেঁধে ছোটে চলা উপভোগ করতে করতে নদীতে জোয়ার এসে পড়ে।ডাক পড়ে মহেশখালী ফেরার। ঘড়িতে সময় তখন বেলা ১১ টা। সকলেই সোনাদিয়ার দুই দিনব্যাপী এই আলোচনা সভা ও মিলনমেলা সুন্দরভাবে উপভোগ করে ছেড়ে এলাম নির্জন দ্বীপ সোনাদিয়া। সোনাদিয়া ছেড়ে এলেও যেন বারবার ডাকে তার অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন