বিয়ে করে প্রতারণা ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে

বিয়ে করে প্রতারণা ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগ এমপি এনামুলের বিরুদ্ধে

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে ভ্রূণ হত্যার অভিযোগ করেছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজা। এমপির বোনের বাড়িতে রেখে সেই বাচ্চা নষ্ট করা হয় বলে দাবি করেন তিনি। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে নিজের ফেসবুক পেজে শেয়ার করা ভিডিও বার্তায় তিনি এ দাবি করেন।

লিজা বলেন, ‘উনি (এমপি এনামুল) আমাকে ২০১৮ সালে বিয়ে করেছেন। আর বাচ্চাটা তার না? বাচ্চা যে তার, সেটার সকল ডকুমেন্টস আমার কাছে আছে। সেগুলো আপনারা দেখতে পারেন। বাচ্চা যে তারই ছিল, সে যে নষ্ট করতে বলছে। সে নিজে নিয়ে গিয়ে নষ্ট করাইছে। তার বোন আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছিল।’

তিনি বলেন, ‘বাগমারার ডক্টর, যাত্রাগাছীতে নিয়ে গিয়ে আমার পেটের বাচ্চাটা নষ্ট করে তার বোন। রাজশাহী নগর ভবনের সামনে এমপি সাহেবেরই এনা প্রোপার্টির যে অফিসটা আছে, সেখানে তার বাসা। সেখানে তার ছোট বোন থাকতো, বেবি নাম। সেই বাসাতে থেকে, সেখানে আমার বেবিটাকে নষ্ট করা হয়েছে।’

লিজা আরও বলেন, ‘প্রথমে এমপি সাহেব আমাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে ক্লিনিকে বাচ্চা নষ্ট করতে চাইছিল। সেখানে রাজি হইনি বলে পরে এখানে থেকে করায়। আমি অ্যাবরশন করতে চাইনি বলে ওষুধ দিয়ে নষ্ট করছে। এমপি সাহেবের নিজের মুখের কথা, মেসেজের স্ত্রিনশর্ট সব আছে। আমি আপনাদের দিতে পারব।’

স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি চাওয়ার পর তাকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও ভিডিও বার্তায় অভিযোগ করেন লিজা। তিনি বলেন, ‘আমাকে এখন হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দেওয়া হবে। কখনো বলছে, অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চালান দেবে। কখনো বলছে, ইয়াবা মামলা দেওয়া হবে। মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে আসছে। আমি নাকি জেলে গিয়েছিলাম। দুই-তিনবার জেল খাটছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে একটা থানাতেও কোনো অভিযোগ বা মামলা হয়নি। নানা ধরনের বাজে কমেন্ট উনি ছড়াচ্ছে।’

নিজের মানসিক অবস্থার কথা বর্ণনা করে আয়েশা আক্তার লিজা বলেন, ‘আমি আজ সাতটা দিন ঘুমাতে পারি না আতঙ্কে। এই মনে হয়, পুলিশ আমাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মামলা দিয়ে চালান দেবে। কেউ গুলি করে আমাকে মেরে ফেলল। এতটা হুমকির মধ্যে... আমি নিরাপত্তা পাচ্ছি না।’

এতদিন পর বিয়ের বিষয়টি প্রকাশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সে আমাকে বলে, নির্বাচনের পর বিয়েটা প্রকাশ করবে। আমাকে বলেছিল, নির্বাচনের পর আমি তোমাকে সম্মান দেব, স্বীকৃতি দেব, বাচ্চা দেব। আমি তার জন্যই এতগুলো ত্যাগ স্বীকার করছি। এখন কেন আমি ব্ল্যাকমেইল করব? আমি যখন দেখলাম সে আমাকে আর স্বীকৃতি দিলো না। ৮টা বছর হয়ে গেল। তখন আমি গণমাধ্যমের কাছে গেছি।’

টাকার ব্ল্যাকমেইল করছে বলে এমপি এনামুলের অভিযোগের বিষয়ে লিজা বলেন, ‘সে আমাকে একটা ম্যাসেজ দেখাতে পারবে না যে আমি তার কাছে চার-আনা চাইছি। বলতে পারবে না যে আমার জন্য সে কিছু করে দিছে। আমার তো কিছুই নাই। আমার জন্য সে কিছু করেনি। আমি কোনো কিছুর আশায় তাকে বিয়ে করিনি। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম।’

পুলিশ তার অভিযোগ নিচ্ছে না বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সে একজন সংসদ সদস্য। কেউ আমার পাশে নেই। পুলিশ অভিযোগ নিচ্ছে না। আমি যতবার থানায় গেছি, ওসি আমাকে অ্যাভয়েড করেছে। বলছেন, আমি বাইরে আছি। বাধ্য হয়ে গতকাল আমি পুলিশ কমিশনার স্যারকে ফোন করেছিলাম। তিনি আমাকে বলছেন, এটা আপনাদের ব্যক্তিগত বিষয়। মামলা করতে চাইলে আদালতে যান। জিডি করতে চাইলে করেন থানায়। পুলিশ জিডি নেবে।’

প্রসঙ্গত, আয়েশা আক্তার লিজার বাড়ি রাজশাহী নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায়। তিনি একজন নারী উদ্যোক্তা। তার অভিযোগ, কয়েক বছর আগে এমপি এনামুল হক তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় ও সম্পর্কে জড়ায়। দীর্ঘদিনের সম্পর্কের পর তারা ১১ মে ২০১৮ তারিখে রেজিস্ট্রি করেন। এর আগে তারা পারিবারিকভাবে বিয়েও করেছিলেন।

তবে এখন আর তাকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না এমপি এনামুল। বাধ্য হয়ে তিনি গেল কয়েকদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অসহায়ত্ব তুলে ধরছেন। এরপর থেকে এমপি এনামুলের লোকজন তাকে হত্যা ও মামলা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিচ্ছেন।

তবে এতদিন লিজা এনামুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও চুপ ছিলেন এমপি। সোমবার তিনিও মুখ খুলেছিলেন। গণমাধ্যমে এমপি এনামুল বিয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই মহিলাকে আমি ২০১৮ সালে বিয়ে করেছিলাম। ডিভোর্স করেছি গত মাসে। এখন কী বক্তব্য থাকতে পারে। এখন যেগুলো করছে, সেটা চাঁদাবাজির জন্য করছে।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password