সারাদেশে আজ থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় ছাত্র সমাজ। এমটাই জানিয়েছেন জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি আল মামুন। সকালে কাকরাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান তিনি। বলেন, কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন যৌক্তিক।
স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসে কোটা ৫ শতাংশের বেশি থাকার কোনো যৌক্তিকতা নেই। জাতীয় ছাত্র সমাজের নেতারা বলেন, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের রেশারেশিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ব্যহত হচ্ছে। ব্যক্তিগত স্বার্থ বাদ দিয়ে সবাইকে ছাত্রদের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান তারা। স্বাধীন কমিশন গঠন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে কোটা সংস্কারের দাবি জানান তারা।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে জাতীয় ছাত্র সমাজের সভাপতি মো. আল-মামুন বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা গত ৪ জুলাই হতে আন্দোলন করছে। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও রেলপথে শান্তিপূর্ণভাবে এবং কোন রকম সহিংসতা ছাড়াই তারা অবরোধ করছে।
আমরা জাতীয় ছাত্র সমাজ সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ও গণমানুষের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছি। আন্দোলনের শুরুর দিকে ছাত্রলীগও কোটা সংস্কারের পক্ষে নমনীয় ছিল। পরে সরকারের বিভিন্ন মহলের বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে তাদের বক্তব্যও পাল্টাতে থাকে। কিন্তু গত দুই দিন ১৫-১৬ জুলাই পরিস্থিতি খুব দ্রুত পাল্টে যেতে থাকে।
এরপরই ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অস্ত্রের মহড়া দিতে শুরু করে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালায়। তাদের হামলার এসব ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত। ছাত্রলীগের নৃশংস এই হামলা অতীতের যে কোনো হামলাকে হার মানিয়েছে।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কাকরাইলস্থ জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মিলনায়তনে সংগঠনের পক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগ হয়েছিল বাইরে থেকে আসা বহিরাগত সন্ত্রাসী, তাদের পিস্তল, হকিস্টিক, লাঠি, রড, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর আক্রমণ করে। যা বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। সব চেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গতকাল ১৬ জুলাই।
সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসী ও কিছু মদদপুষ্টু পুলিশ সদস্যের গুলিতে ৬ জন নিহত হন। শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়ে সঙ্কটাপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ওপর কাপুরুষোচিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাই। আল-মামুন বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সূর্য সন্তান। তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। কিন্তু বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ- এই সংখ্যাটা অনেক বেশি। মুক্তিযোদ্ধারা অবশ্যই সুবিধা পাবেন, তাদের সন্তান কিংবা যারা তাদের ওপর সরাসরি নির্ভরশীল তারা সুবিধা পাবেন।
কিন্তু নাতি-নাতনি পর্যন্ত ৩০ শতাংশ সুবিধা পাবেন- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করে শিক্ষার্থীরা। মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা পেরিয়ে গেছেন, তাদের সন্তানেরাও চাকরির বয়স পেরিয়ে গেছেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। স্বাধীনতার এতো বছর পরে এসে এই কোটা ৫ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত না।
একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিবেচনায় নিয়ে অপ্রয়োজনীয় কোটা সুবিধা বাতিল করে মেধাবিকাশের সুযোগ উন্মোচিত করে কোটাব্যবস্থার সংস্কার করা উচিত। শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সমতায় আনার জন্য বিশেষ বিবেচনা রাখতে হবে।
সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম খান বলেন, সবুজের বুকে লাল বৃও খচিত এই মানচিত্র ছাত্র আন্দোলনের অর্জন। স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরবর্তীতে কোন ছাত্র আন্দোলন বিফলে যায়নি, ভবিষ্যতেও হয়তো যাবে না। ছাত্ররা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, ইতিহাস সৃষ্টি করবে।
কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্রদের আন্দোলন পুরোপুরি যৌক্তিক। রাষ্ট্রের উচিত এই দাবি পর্যালোচনা করে কোটা প্রথা সীমিত করা। সাম্যতা বজায় রাখতে এটিকে বাস্তবায়ন জরুরি। জাতীয় ছাত্রসমাজ এই দাবিকে শতভাগ সমর্থন করে এবং শিক্ষার্থীদের সকল নায্য দাবির সাথে ছাত্রসমাজ ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতে থাকবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন