বরিশাল প্রতিনিদিঃ- বরিশাল নগরীর এআরএস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না আফরিনের (১৫) আত্মহত্যার ঘটনায় দুদিন পরে তার হাতে লেখা একটি চিরকুট উদ্ধার করেছে পরিবার। চিরকুটে তামান্না তার মৃত্যুর জন্য প্রেমিক সাদমান গালিবকে দায়ী করেছেন। গত শুক্রবার আত্মহনন করা তামান্নার পড়ার টেবিলে গনিত খাতার শেষ পাতায় চিরকুটে লিখেছেন, 'আমি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমার মৃত্যুর জন্য শুধু একজনই দায়ী। তার নাম হলো সাদমান গালিব। আমি ওকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু ও (গালিব) আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাই আমি ওকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না ভেবে সবাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি সাদমানকে অনেক ভালোবাসি, ও বুঝল না। আশা করি আমার মরার পর ও (গালিব) আমার ভালোবাসাটা অনুভব করবে। আমি আর বেশী কিছু বলতে চাই না। বিদায় সাদমান।'
পরিবারের পক্ষ থেকে উদ্ধারকরা চিরকুটের সূত্র ধরে আত্মহত্যার প্ররোচণার অভিযোগ এনে তামান্নার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) থানায় একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছেন। অভিযোগ দেওয়ার চারদিন পার হলেও বৃহস্পতিবার রাত ১০ পযর্ন্ত সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়নি। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবার। তবে থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীর বাবার দেওয়া আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
নিহত তামান্নার স্বজনরা জানান, তামান্নার বাবা ও মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ২০১৮ সালে। এরপর থেকে সে ও তার ছোট বোনসহ নগরের ১৩নম্বর ওয়ার্ডের কাজীপাড়া এলাকার মায়ের সঙ্গে নানাবাড়ি থাকতো। এর সুবাদে নগরীর জুমির খান সড়কের সাদমান গালিব নামে এক ছেলের সঙ্গে তামান্নার পরিচয় হয়। এক পর্যায়ে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে।
মাঝে মাঝে তারা বিভিন্ন স্থানে দেখা করত এবং ঘোরাঘুরিও করতে। এ সময় গালিব তার ফোনে তাদের অন্তরঙ্গ মূহুর্তের কিছু ছবি ধারন করে। যা নিজ হেফাজতে রেখে সাম্প্রতিক সময়ে গালিব তামান্নর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে তামান্না। প্রেমিকের প্রতারণার কারণে ক্ষোভ এবং অভিমানে গত ২ এপ্রিল দুপুরে নানাবাড়িতে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
তামান্নার মরদেহ উদ্ধারকারী কোতয়ালী মডেল থানার উপপরিদর্শক অলিভ জানান, তামান্নার ব্যবহৃত একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। মুঠোফোনে কিছু আলামত পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাইবাচাই করা হচ্ছে।
তামান্নার বাবা রফিকুল ইসলাম টিপু জানান, প্রায় ছয় মাস আগে তামান্নাকে চাইনিজ খাবারের সঙ্গে চেতনানাশক খাইয়ে নিজ বাসায় নিয়ে যায় গালিব। খবর পেয়ে গালিবের বাসা থেকে প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় তামান্নাকে উদ্ধার করা হয়। ওইদিন গালিব তামান্নার অশ্লীল ছবি এবং ভিডিও মোবাইল ফেনো ধারন করে রাখে বলে অভিযোগ করেন টিপু।
পরে ওই ছবি ও ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তামান্নার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবী করে গালিব। ওই ছবি দিয়ে ব্লাকমেইল করে তামান্নার সাথে বিভিন্ন সময় গালিব শারীরিক সম্পর্কে জড়ায় বলে সন্দেহ করা হয়। ওই চিরকুটসহ গত মঙ্গলবার সাদমান গালিবের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
তামান্নার মা জাকিয়া বেগম বলেন, কথিত প্রেমিকের প্ররোচণায় গত ২ এপ্রিল তামান্না আত্মহনন করল। চারদিন পর ৬ এপ্রিল তিনি প্রমাণসহ কোতয়ালী মডেল থানায় অভিযোগ দেওয়া হল। কিন্তু পুলিশ এখনো মামলাটি রুজু করেনি।
অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পুরো বিষয়টি আমরা তদন্ত করে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে। অভিযুক্ত সাদমান গালিবকে আটকের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালানা করা হচ্ছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন