নওগাঁয় লকডাউনের কার‌ণে আম নিয়ে বিপাকে বাগান মালিকরা

নওগাঁয় লকডাউনের কার‌ণে আম নিয়ে বিপাকে বাগান মালিকরা

নওগাঁর হাটবাজার, আড়ত ভরে গেছে নানা জাতের আমে। ২৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে আম পাড়া শুরুর পর যে হারে আম বাজারে আসছে সেই অনুপাতে ক্রেতা নেই। ব‌্যবসায়ীরা বল‌ছেন, লকডাউনের কার‌ণে দূরের পাইকাররা আসতে না পারায় আম বি‌ক্রি কর‌তে পারছেন না। এবার ব‌রেন্দ্র এলাকায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকার আম বেচাকেনার আশা করলেও তা কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন ব‌্যবসায়ীরা।

গাছ থে‌কে নামা‌নো আম বি‌ক্রির জন‌্য হা‌টে আন‌ছেন বাগান মালিকরা। ল্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ, নাক ফজলিসহ বাহারি জা‌তের আমের সরবরাহ বে‌ড়ে‌ছে নওগাঁর সাপাহা‌র আমের হাটে। ত‌বে দূরের বেপারি না আসায় কেনাবেচায় ছেদ প‌ড়ে‌ছে।

সড়‌কের দু’পা‌শে বি‌ভিন্ন বাহ‌নে ক‌্যারা‌টে ভরা আম নি‌য়ে বি‌ক্রির জন‌্য অপেক্ষায় বাগান মালিকরা। সরবরা‌হের তুলনায় ক্রেতা কম থাকায় সপ্তাহের ব‌্যবধা‌নে সব ধর‌নের প্রতি মণ আমের দাম ২০০ টাকা পর্যন্ত প‌ড়ে গে‌ছে।

আম বি‌ক্রেতারা জানান, গোপাল ভোগ ১৩০০ থে‌কে ১৪০০, লেংড়া ১৩০০ থে‌কে ১৩৫০ টাকা, হিম সাগর ১৪০০ থে‌কে ১৫০০ টাকা, লকনা ৬০০ থে‌কে ৭০০ টাকা, নাক ফজ‌লি ১১০০ থে‌কে ১২০০ টাকা দরে। স্থানীয় বেপারিরা বলছেন, ক‌রোনায় লকডাউ‌নে দূরের পাইকাররা আসতে পারছেন না, এতে প‌ড়ে গে‌ছে দর।

দাম পড়ে যাওয়ার কারণে জেলার আম বিক্রির টাকা যেটা আশা করা হয়েছিল তা পূরণ হ‌বে না বলেও জানান নওগাঁর সাপাহার আম আড়ত স‌মি‌তির ভারপ্রাপ্ত সভাপ‌তি মো. জয়নাল আবে‌দিন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, জেলায় এবার ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টরে আমের ফলন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৫ শ কোটি টাকার আম বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে করোনার প্রকোপ ও লকডাউনে আমের বাজারগুলোতে এবার বাইরের পাইকাররা কম আসছেন।

করমুডাঙ্গা গ্রামের চাষি মনিরুল ইসলাম আম নিয়ে এসেছেন সাপাহার সদরের আড়তে বিক্রি করতে। তিনি জানান, ‘২০ বিঘা জমিতে আমের আবাদ করেছি। সকাল থেকে দুটি ভ্যানে করে নাগফজলি ও গুটি জাতের আট মণ আম নিয়ে বসে আছি, ক্রেতা তেমন নেই। কয়েকজন ক্রেতা এসে যে দামে আম কিনতে চাচ্ছেন সেটা বলার মতো নয়। ‘গুটি আমের দাম বলছেন ৫০০ টাকা মণ আর নাগফজলির দাম বলছেন ১৪০০ টাকা।

আম আবাদে প্রতি বিঘায় শ্রমিক, সেচ, নিড়ানি, ভিটামিনজাতীয় ওষুধ প্রয়োগে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এত কম দামে আম বিক্রি করলে লাভ করতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনে ব্যবসায়ীদের আম কেনার জন্য নওগাঁয় প্রবেশে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ব্যবসায়ীরা পুরোদমে নওগাঁ আসতে শুরু করলে আমের বাজার দাঁড়িয়ে যাবে, বেচা-কেনা বাড়বে, চাষিরাও ভালো দাম পাবেন।

সাপাহার আম আড়তদার সমিতির সভাপতি কার্ত্তিক সাহা জানান, রাজশাহী বিভাগে আমের মূল পাইকারি ব্যবসায়ীরা হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট ও ভোলাহাট উপজেলার। করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা আসতে পারছেন না। আড়তে আসা শ্রমিকদেরও করোনার পরীক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী এখনও বাজারে আসা শুরু করেননি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নওগাঁর উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুদ জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ২৫ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে এক টন হিসাবে জেলায় ৩ লাখ ৬২ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৫০০ কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password