দোহারের নারিশা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি অপার সম্ভাবনার আরেক টি পর্যটন স্পট। এখানে আগত ভ্রমণ পিপাসু দর্শনার্থীরা নৌকায় উঠে পদ্মা নদীতে বিচরণ এবং নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে। ইঞ্জিন চালিত নৌকার পাশাপাশি দু চারটা নৌকা চোখে পড়ে বৈঠা চালিত নৌকা। দেখা যায়, সবাই তাকিয়ে আছে দর্শনার্থীদের দিকে।
এদের মধ্য দু চারজন বৈঠা চালিত কোষা নৌকার মাঝি। এদের মধ্যে চোখে পড়েলো মন্টু দাস কে। সে ডেকে চলেছে আহেন আহেন মামা, আমার নায়ে উডেন। গতকাল মন্টু দাস এর সাথে আলাপ কালে জানায়, দর্শনার্থীদের কে নৌকায় ঘুরিয়ে উপার্জিত টাকা দিয়ে চালাচ্ছে সংসার।
শীত মৌসুম সময়টাতেই দর্শনার্থীদের ভিড় একটু বেশী হয়। তা কমে গেলে পড়তে হয় বিপাকে। নৌকায় করে দর্শনার্থীরা পদ্মা নদীতে ঘুরিয়ে, বিনিময়ে নিচ্ছে টাকা। বৈঠা আর নৌকার সাথে সম্পর্ক তার। এ দূটোই তার জীবনের প্রতিরূপ। বৈঠা দাপিয়ে পদ্মার বুক চিরে উজান ঠেলে নৌকা নিয়ে চলে যায়। কিছুদূর যাওয়ার পর নৌকার হাল ছেড়ে দেয়, ভাটির টানে নৌকা এসে পৌঁছায় আবার নির্দিষ্ট স্থানে ।
এভাবেই চলতে থাকে প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। ঘণ্টা ও দর্শনার্থীদের সংখ্যা ভেদে সে পয়সা নিয়ে থাকে। প্রতিদিন সাধারণত সে ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা উপার্জন করে। তবে ছুটির দিনে টাকার অঙ্ক ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত হয়।
মন্টু দাস জানায়, কখনো কখনো দর্শনার্থীরা তাকে গান গাইতে অনুরোধ করে। সে গাইতে না পারলেও তাদের গান গেয়ে ক্ষণিকের জন্য আনন্দ দিয়ে থাকে। মন্টু দাস বলে অধিকাংশ দর্শনার্থীর ব্যবহার ভালো। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা উলটো। যা সে মুখ বুঝে সহ্য করে নেয়। এর কারণ খুঁজে তেমন কিছু পায়ও না সে। মূর্খ বলে দোষ চাপাতে তার মনে বাধা আসে।
সে শুধু ভাবে জ্ঞান-পরিসীমার। সব দোষ সে মাথা পেতে নেয়। প্রতিবাদ করে না। মন খারাপ হলে সে শুধু তাকিয়ে থাকে দিগন্ত জোড়া পদ্মা পাড়ের সূর্যাস্তের দিকে, এতেই সে তৃপ্তি পায়। সে ভাবে, হয়ত এভাবে সেও একদিন হারিয়ে যাবে, কোন এক জায়গায়। মন্টু দাসের বয়স প্রায় ৮৮ বছর । স্থায়ী নিবাস ছিল মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে। বিয়ের সূত্র ধরে এসেছে দোহারে। এখন চরজয়পাড়ায় থাকছে।
প্রথম থেকেই সে থাকছে ভাড়া বাড়িতে। এখনো তা উন্নতি করতে পারে নি। মন্টু দাস ৫ সন্তানের জনক। বিয়ে দিয়েছে দুই ছেলে দুই মেয়েকে। স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে তার সংসার। তাকে গান গাইতে অনুরোধ করা হলে সে একটি গানের সুর ধরে, বেসুরা কন্ঠে গাইতে থাকে, ‘মন মাঝি তোর বৈঠা নে রে, আমি আর বাইতে পারি না’।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন