বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে অপর এক নারী প্রধান শিক্ষককের অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ওই নারী প্রধান শিক্ষকের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন উপজেলার শিক্ষকরা।
এমন পরিস্থিতিতে উপজেলার তিনটি প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে জরুরি সভা করে ওই দুই প্রধান শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে এ ঘটনায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত দুই শিক্ষক হলেন-বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন এবং একই উপজেলার মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা নার্গিস। তার দুই সন্তান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোক্তার হোসেনের সঙ্গে শামীমা নার্গিসের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন সময় মোক্তার হোসেন তার স্কুলে শামীমা নার্গিসকে ডেকে নিতেন। দরজা বন্ধ করে তারা একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটাতেন। তারা একসঙ্গে বিভিন্নস্থানে ঘুরতে যেতেন এবং একই সঙ্গে রাত কাটাতেন। বিষয়টি শামীমা নার্গিসের স্বজনরা টের পেয়ে যান। তারা এ বিষয়ে তাকে সতর্ক করেন।
এরপর শামীমা নার্গিস মোক্তার হোসেনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন এবং তার প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে বলেন। তার শর্ত অনুযায়ী মোক্তার হোসেন তার প্রথম স্ত্রীকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নোটারির মাধ্যমে তালাক দেন। এরপর ২৯ সেপ্টেন্বর নোটারির মাধ্যমে তিনি শামীমা নার্গিসকে বিয়ে করেন। এর মাসখানেক পর মোক্তার হোসেন শামীমা নার্গিসকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেন। একপর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। পাশাপাশি তালাক দেয়ার পরও মোক্তার হোসেন তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সংসার করছিলেন।
স্ত্রীর মর্যাদা পেতে শামীমা নার্গিস সম্প্রতি বিষয়টি বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানান। এরপর মোক্তার হোসেনের সঙ্গে শামীমা নার্গিসের অন্তরঙ্গ ছবি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন বিডিটাইপকে বলেন, ‘শামীমা নার্গিস তার বিবাহিতা স্ত্রী। ভুল বোঝাবুঝির কারণে শামীমা তার সম্পর্কে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে কিছু বলেছেন। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝামেলা হতেই পারে। এটা একটি পক্ষ ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।’অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ফাঁসের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ছবি কীভাবে ফাঁস হলো তিনি জানেন না।
মুশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শামীমা নার্গিস বলেন, ‘মোক্তার হোসেন আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি প্রথম স্ত্রীকে তালাক ও আমাকে বিয়ের কথা বলে আমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়েন। কিন্তু প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়েও এখন তার সঙ্গেই বসবাস করছেন।’
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. জাহিদুর রহমান সিকদার বলেন, ‘সম্প্রতি নারী শিক্ষিকার সঙ্গে মোক্তার হোসেনের আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে নানা মন্তব্য করা হয়। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এতে শিক্ষক সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাই দুপুরে উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতি, সহকারী শিক্ষক সমিতি ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি যৌথ সভা করে প্রধান শিক্ষক মোক্তার হোসেন ও শামীমা নার্গিসকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকবর কবির বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক মো. মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারি ছাড়াও অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ ১৭টি অভিযোগ রয়েছে। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে সহকারী শিক্ষা অফিসার মো. রোমাঞ্চ আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন