বিক্ষোভকারীদের রক্তে আবারও লাল হয়ে গেছে মিয়ানমারের রাজপথ। সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় চলমান জান্তা বিরোধী বিক্ষোভে গত রবিবারে একদিনে সর্বোচ্চ নিহতের সংখ্যা ছিল ১৮। আর দু দিন পার না হতেই বুধবার (৩ মার্চ) সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত আইনশৃঙ্খলবাহিনীর গুলিতে রাজপথে একদিনেই ঝরে গেলো এর দ্বিগুণেরও বেশি তাজা প্রাণ। দেশটির বিভিন্ন শহরে এ দিন প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন অন্তত ৩৮ জন মানুষ। গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর এক মাসের মধ্যে বুধবারের এ দিনটি মিয়ানমারের জন্য হয়ে ওঠে গণতন্ত্রকে ভালোবাসা মানুষের জীবন দিয়ে লেখা এক রক্তগঙ্গা। হয়ে ওঠে গণতন্ত্র পিপাসু মিয়ানমারের ইতিহাসে সেনা নৃশংসতার কালো একটি দিন। এদিন আহত হয় আরও অনেক মানুষ। আটক করা হয় আরও কয়েকশ মানুষকে। খবর গার্ডিয়ান, ইরাবতি ও রয়টার্সের।
মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের দূত ক্রিস্টাইন শ্রেনার বার্গেনার বলেন, দেশের বিভিন্ন শহর থেকে মর্মন্তুদ সব ফুটেজ আসছে। বুধবার অন্তত ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে তাজা গুলি ব্যবহার করছে বলেই মনে হচ্ছে। এ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
এ নিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশটিতে গণতন্ত্রের জন্য এ পর্যন্ত প্রাণ দিলো ৫৯ জন মানুষ। সামনের দিনগুলোতে নিহতের সংখ্যা বাড়বে বলেই আশংকা করা হচ্ছে। কারণ, গত কয়েকদিনে আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর বলে দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা।
কিশোর কিশোরীদের গুলি করতেও দ্বিধা করছে না সেনা নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনী। বুধবার নিহতদের মধ্যে এক ১৯ বছর বয়সী কিশোরী এবং ১৪ বছর বয়সী কিশোরও রয়েছে।
মিয়ানমারভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনার্সের জয়েন্ট সেক্রেটারি কো বো কি বলেন, সতর্কবার্তা ছাড়াই বুধবার দেশটির কয়েকটি শহরে গুলি চালানো হয়েছে। ইয়াঙ্গুন, ওক্কালাপা, মান্দালয়, মনিওয়া, মিনগিয়ান, পাকান্ত শহরে বিক্ষোভকারীদের নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ইয়াঙ্গুন ভিত্তিক মানবাধিকার কর্মী থিনজার সুনলেই ই শান্তিপূর্ণ নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর সেনাবাহিনীর শক্তি প্রয়োগের ধরন দেখে মন্তব্য করেন, তারা ’কসাইয়ে’র মতো প্রতিদিন মানুষ হত্যা করছে।
উত্তর ওক্কালাপা শহরতলিতে এক বিক্ষোভে অবিরাম গুলি করতে থাকে দাঙ্গা পুলিশ। এ শহরে অন্তত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক।
এক প্রত্যক্ষদর্শী বিক্ষোভকারী বলেন, আমি এরপরও সামনের সারিতে থেকে লড়াই করতে চাই। গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাতে হলে, হারাবো প্রাণ। আমার পক্ষে এ পরিস্থিতি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
পার্শ্ববর্তী শহর ইয়াঙ্গুনে দাঙ্গা পুলিশ অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর সমানে গুলি করতে থাকে। এতে অন্তত ৮ জন প্রাণ হারায়।
মধ্যাঞ্চলী মান্দালয়ে নিহত হয়েছেন অন্তত ৭ জান। এদের মধ্যে মান্দালয় শহরেই অন্তত তিন জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে অন্তত এগারজন। এছাড়া মান্দালয়ের মিয়ানচান শহরে একজন, মাগউয়ি শহরে দুইজন ও মৌলেমিন শহরে একজন নিহত হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাগাইন অঞ্চলের মনিওয়া শহরে অন্তত ৭ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ৭০ জন। সকাল ১১টার দিকে শতাধিক আন্দোলনকারী বিক্ষাভ শুরু করতে রাজপথে নেমে এলেই পুলিশ গুলি বর্ষণ করে।
মিনগিয়ান শহরে একজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন।
মিয়ানমারে ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে দেশটির সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে। প্রথম থেকেই সেনাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হতে থাকে মিয়ানমার। কিন্তু গত শনিবার থেকে পুলিশ মারাত্মক বেপরোয়া আচরণ করতে থাকে। আন্দোলনকারীদের বেধরক লাঠিপেটা থেকে তাদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন