গাজীপুরের কাপাসিয়ার চালা, আড়াল আঞ্চলিক সড়কের দু’পাশেই রয়েছে আম,কাঠাঁল,জাম,লিচু,মেহগনিসহ বিভিন্ন ধরনের গাছের সারি।
উপজেলার ঘাগটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকায় সোমবার (১২ জুলাই) দুপুরে দেখা যায়, হাতে একটা লম্বা বাঁশ ও থলে নিয়ে এক পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তি গাছে গাছে কি যেন খোঁজে ফিরছেন। তার কাছে গিয়ে কথা বলে জানা গেলো, তিনি লাল পিঁপড়ার বাসা খোঁজে খোঁজে সেই বাসা থেকে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করেন।
রাস্তার দু’পাশের গাছপালা থেকে ও বিভিন্ন এলাকার ঝোপ ঝাড়, জঙ্গল থেকে সাদা রঙের ডিম সংগ্রহ করা ওই ব্যক্তি হলেন গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখন্ড এলাকার মোঃ আব্দুল মান্নান (৬০)।
তার মতো একই এলাকার আরো ৭০/৮০জন এই লাল পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে তা বিক্রি করেই চলে সংসারের চাকা। তারা লাল পিঁপড়ার ডিম প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার পাঁচশত টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে থাকেন। আর এই ডিম বিক্রির উপার্জিত টাকা দিয়েই চলে সংসারের চাকা।
লাল পিঁপড়ার ডিম কিভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সাধারণত সব পিঁপড়ার বাসায় ডিম পাওয়া যায় না। আমাদের অন্য পিঁপড়ার বাসার ডিম হলে চলবেনা, চাই লাল পিঁপড়ার বাসা। যেখান থেকে পাওয়া যাবে প্রচুর পরিমাণে সাদা রঙের ডিম। আর এই ডিমই হচ্ছে তার জীবিকা নির্বাহের অন্যতম হাতিয়ার। সাধারণত আম,লিচু,মেহগনি,রইনাসহ দেশীয় গাছগুলোতেই লাল পিঁপড়ার বাসা বেশি পাওয়া যায়। এসকল গাছগুলোতে উপরের দিকের কয়েকটা ডালের আগার পাঁচ ছয়টা পাতায় মুখের লালা ব্যবহার করে জোড়া দিয়ে শক্ত বাসা তৈরী করে পিঁপড়ার দল। ওইসব বাসা থেকেই ডিম পাওয়া যায়। বিশেষ করে বড় বাসা থেকেই ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণের কাজটা খুবই সতর্কতার সঙ্গে করতে হয়। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে বিক্রি হয়। আর ডিম আস্ত না রাখলে মাছ খায়না।
তিনি আরও বলেন, ডিম সংগ্রহের কাজ আমি ৩৫ বছর ধরে করতেছি। ডিম সংগ্রহের সুবাদে দেশের প্রায় ২৫টি জেলায় ঘুরতে পেরেছি। ডিম সংগ্রহকে আমি পেশা হিসেবে নিয়েছি কারণ এই ডিম বিক্রির টাকা দিয়েই আমার ৪ মেয়েকে বিয়ে দিতে পেরেছি এবং একমাত্র ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে পেরেছি। তাই ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে ও রোদে পুড়ে সংগ্রহ করি লাল পিঁপড়ার ডিম। গর্বের সহিত তিনি বলেন, লাল পিঁপড়ার ডিমই আমার সংসারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে দিয়েছে। আর পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ কাজে কোন ধরণের পুঁজি লাগে না বললেই চলে। এজন্য তিনি এটাকে জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গজারী বনের গাছ বা দেশীয় বিভিন্ন গাছ থেকে পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করা হয়। বন ও গ্রাম থেকে ডিম সংগ্রহ করে জীবন্ত ডিম বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন তারা। প্রচন্ড গরমে অনেক সময় ডিম নষ্ট হয়ে যায়। ডিম ছায়াযুক্ত স্থানে বাশেঁর চাটায় টাঙিয়ে রাখতে হয়। এক ধরণের লাল পিঁপড়া মেহগনি,রইনা,লিচু,আমসহ বিভিন্ন ধরণের গাছের কিছু পাতা দিয়ে গোলাকার বাসা বানিয়ে ভেতরে অসংখ্য ছাড়ে। আর পিঁপড়ার ডিম ব্যবসায়ীরা লম্বা বাঁশের মাথায় ডালি বেঁধে সে ডিম পেড়ে আনেন। আর এই ডিমগুলোর ক্রেতা হচ্ছে বরশি দিয়ে সৌখিন মাছ শিকারীরা। গ্রামে যারা পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে তাদের থেকে কিনে নেওয়ার জন্য বেপারী আছেন। বেপারীরা কিনে নিয়ে গাজীপুর জেলা শহরে আবার কেউ কেউ ঢাকায় নিয়েও বিক্রি করে থাকেন। পানির নির্দিষ্ট স্থানে খাবার ফেলে মাছ ডেকে আনার জন্য এই ডিমের চাহিদা ব্যাপক রয়েছে জেলেদের কাছেও। এজন্য অনেক সময় জেলেরাও তাদের কাছ থেকে ডিম কিনে থাকেন।
ডিম সংগ্রহকারীরা যদি সারাদিনে ১ থেকে ২ কেজি ডিম সংগ্রহ করতে পারেন, তাহলেই তাদের সংসারের সকল খরচ মিটে গিয়ে কিছু টাকা আয়ও হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন