মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের নেতাদের অবশ্যই দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী অং সান সু চিকে মুক্তি হবে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব জাতিসংঘে এমন আহ্বান জানাতে যাচ্ছেন। আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য দেবেন ডমিনিক রাব। এই বক্তব্যে তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা ছাড়তে বলবেন। একই সঙ্গে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাতে বলবেন।
মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের কাছ থেকে এমন আহ্বান আসছে।
গত শনিবার মিয়ানমারের মান্দালয় শহরে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। গুলিতে দুজন নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হন। মিয়ানমারে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভে সবচেয়ে সহিংস ও রক্তক্ষয়ী দিন ছিল শনিবার।
ওই গুলির ঘটনায় ইতিমধ্যে টুইটারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ডমিনিক রাব। তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি অগ্রহণযোগ্য।
ডমিনিক রাব বলেছেন, গণতন্ত্রকে দমন ও বিরুদ্ধমতকে রুদ্ধ করার বিরুদ্ধে তাঁরা তাঁদের আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ডমিনিক রাব বলবেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটছে।
ডমিনিক রাবের বক্তব্যে রোহিঙ্গা ইস্যুও উঠে আসবে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে তিনি বলবেন, মিয়ানমারের বর্তমান সংকট দেশটির রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর জন্য আরও ঝুঁকি তৈরি করছে। তিনি সু চিসহ দেশটির বেসামরিক নেতাদের মুক্তির জন্য আহ্বান জানাবেন।
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) বিপুল ভোটে জয়ী হয়। নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে ১ ফেব্রুয়ারি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সেনাবাহিনী। আটক করা হয় এনএলডির নেতা সু চিসহ দলটির শীর্ষ নেতাদের। একই সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করে।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে টানা বিক্ষোভ চলছে। দিন যত গড়াচ্ছে, বিক্ষোভের ব্যাপকতা তত বাড়ছে। শনিবার নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে দুই বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পরদিন গতকাল রোববার দেশটির সব শহরে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। এতে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।
এ ছাড়া জান্তাবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর প্রথম প্রাণ হারানো মিয়া থোতে থোতে ইয়াংয়ের শেষকৃত্য গতকাল রাজধানী নেপিডোয় সম্পন্ন হয়। এতে মানুষের ঢল নামে। হাজারো শোকার্ত মানুষ তাঁকে শ্রদ্ধা জানান।
৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানী নেপিডোতে সেনাশাসনবিরোধী বিক্ষোভকালে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত হন মিয়া থোতে থোতে ইয়াং। ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
মিয়ানমারে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন