যশোরের শার্শায় ফসলি জমির মাটি বিক্রির সিন্ডিকেট ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর এই সিন্ডিকেটে সরাসরি জড়িয়ে রয়েছে খোদ ইউপি সদস্যরা। ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চলছে ফসলি জমির মাটি কেনাবেচা। এভাবে কৃষি জমির মাটি কাটায় একদিকে যেমন ফসলি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে অন্যদিকে অনুর্বর হয়ে পড়ছে চাষের জমি।
গত শুক্রবার উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে সরেজমিনে তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২৪ বিঘার বিশাল ফসলি জমির মাটি কাটছেন ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার শহিদুল ইসলাম। কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে এসব মাটি বিক্রি করা হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ইটভাটায়। রাতদিন মাটিবহণকারী মাহেন্দ্রর শব্দে নাকাল হয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষের জনজীবন। পাশাপাশি চব্বিশ ঘণ্টা মাটি বহন করার ফলে এলাকার রাস্তা ঘাট সহ অন্যান্য ফসলি জমি চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব ফসলি জমিতে পুকুর খনন করে শত শত বিঘা আবাদি কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি খেকোরা। অন্যদিকে কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার ভারত থেকে আমদানি করা মাহেন্দ্র দিয়ে মাটি আনা নেয়ার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের অবস্থা বেহাল।
এছাড়াও জমির উপরিভাগের মাটি কাটার ফলে জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে ওই সব জমিতে ধান রোপণ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। যেখানে খোদ ইউপি সদস্যরাই মাটি খেকোর ভূমিকায় সেখানে প্রশাসনের নিকট ভয়ে কোন অভিযোগ জানাতে পারছেনা সাধারণ মানুষ। গ্রামীন পরিবেশের সাধারণ মানুষ গুলো জানান, মাটি কাটার সাথে সরাসরি ইউপি সদস্যরা জড়িত।
প্রশাসন বিষয়টি জানেনা এটা আমাদের বিশ্বাস হয়না। এভাবে শুধু নিজামপুর ইউনিয়নই নয় শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন জুড়ে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহা উৎসব চলছে। এবং প্রতিটি এলাকায় এসব মাটি কাটার সাথে সরাসরি ইউপি সদস্যরা জড়িত। ২৪ বিঘা আবাদি জমি নষ্ট করে মাটি কাটার সময় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শুধু আমি একা মাটি কাটছি না। অন্যরাও কাটছে।
তাছাড়া উপর মহলে সব সেক্টরে ম্যানেজ করে মাটি তুলতে হয়। ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি কাটা নিষিদ্ধ তবু কিভাবে তিনি মাটি কাটছেন এমন প্রশ্নে করলে শহিদুল মেম্বার সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয়ে ওঠেন এবং পারলে কিছু করে নেন বলে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেন। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে জানা যায়, ফসল উৎপাদনের জন্য যে জৈব পদার্থ দরকার তা সাধারণত মাটির উপর থেকে আট ইঞ্চি গভীর পর্যন্ত থাকে।
মাটির উপরিভাগ কেটে নিলে জমির উর্বরতা শক্তি হারায়। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন জমি উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। তাই জমিতে ভালো ফসল পেতে হলে জমির উপরিভাগের মাটি কোনো মতেই কেটে নেয়া যাবে না। এ বিষয়ে শার্শা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নুসরাত ইয়াসমিন বলেন, কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রির বিষয়ে আমার জানা নেই। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার তথ্য পেলে খোঁজ খবর নিয়ে এদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন