যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম তার সঙ্গে কথা বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল সোমবার রাতে টুইট করে মোদি নিজেই এ কথা জানিয়েছেন। দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা হয়েছে বলে টুইটারে উল্লেখ করেছেন মোদি। তিনি জানিয়েছেন, পরিবেশ থেকে মিয়ানমার, বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
টুইটে মোদি লিখেছেন, ‘আমি তার সাফল্য কামনা করেছি। স্থানীয় বিষয়ে এবং আমাদের যৌথ অংশিদারিত্বের বিষয়ে কথা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে ঐক্যমত্য হয়েছি আমরা।’ বাইডেন হোয়াইট হাউসের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রায় দুই সপ্তাহ আগে। আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্টকে এরপর টুইট করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন মোদি। তবে সরাসরি কথা হলো এই প্রথম।
বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্ক ছিল নরেন্দ্র মোদির। তাই এবার বাইডেন জিতে আসাকে ভারত সরকারের জন্য কিছুটা বিব্রতকরই মনে করছিলেন বিশ্লেষকরা। চীনের বিরোধিতা করতে গিয়ে ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেক দূর বিস্তৃত করেছিলেন। ডেমোক্র্যাট বাইডেন চীনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটাবেন বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা। এ ক্ষেত্রে ভারতকে ট্রাম্প যে গুরুত্ব দিয়েছেন, বাইডেন তা দেবেন না বলেও অনেকে মনে করছেন। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আমেরিকায় ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে নরেন্দ্র মোদি স্লোগান দিয়েছিলেন ‘আব কি বার ট্রাম্প সরকার’।
সোমবার মোদি-বাইডেন কথায় অবশ্য বিব্রতকর পরিস্থিতির কোনো ইঙ্গিত মেলেনি। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে এ দিন তাদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের শক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। সেখানে চীনের শক্তি কমাতে ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে জোট তৈরি করেছিল আমেরিকা।
এই ফোনালাপে সে বিষয়েও দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক প্রসঙ্গও উঠেছে তাদের দীর্ঘ আলোচনায়। নরেন্দ্র মোদি টুইটে লিখেছেন, ‘রুলবেসড ইন্টারন্যাশনাল অর্ডার’ রক্ষার জন্য দুইটি দেশই সরব হবে। এখানেই মিয়ানমারের প্রসঙ্গ প্রচ্ছন্নভাবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে মনে করেছেন অনেকে। তবে আমেরিকা জানিয়েছে, মিয়ানমার নিয়ে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের আলোচনা হয়েছে।
পরিবেশ এবং জলবায়ু নিয়ে কার্যত উদাসীন ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকেও যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। বাইডেন এসেই আবার জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে গেছেন। এ দিনের আলোচনায়ও জলবায়ু এবং পরিবেশ নিয়ে দুই নেতার কথা হয়েছে। বিশ্ব পরিবেশ রক্ষায় দুই দেশ একত্রে কাজ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।
তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বাইডেন মোদিকে কোনো প্রশ্ন করেছেন কি-না, দুই দেশের দেওয়া বিবৃতি থেকে এখনো তেমন কোনো তথ্য মেলেনি। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাইডেন ঘনিষ্ঠ কমলা হ্যারিসের ভাইঝি মিনা হ্যারিসকে নিয়ে বিজেপি যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ প্রশ্ন উঠেছে। মিনা কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। যার জেরে প্রকাশ্যে তার ছবি পুড়িয়েছে গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা।
সূত্র: আলজাজিরা, ডয়েচে ভেলে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন