আজ মনে শান্তি, মুখে হাসি নিয়ে বাড়ি ফিরছে সেই মা ও তার ছেলে। করোনার ভয়াবহতায় দেশে যখন কঠোর লকডাউন তখন একটি ছবি সবার নজরে আসে। করোনায় আক্রান্ত মাকে নিয়ে এক ছেলের ছুটে চলা। তার পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে মাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আজকের চিত্রটা স্বস্তির। সেই মা এখন সুস্থ। হাতপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। মাকে নিয়ে তাই বাড়ি ফিরছেন ছেলে। সেই মোটরসাইকেলে করেই মাকে নিয়ে তার ফেরার ছবি আজও ফেসবুকে ভাইরাল।
সেই মা ছেলের ছবি অনেকে আজকে ফেসবুকে শেয়ার করছেন। আজকের দুটি ছবির একটিতে দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালের সামনে বিজয় চিহৃ ভি দেখাচ্ছেন ছেলে। মাঝে মা। পাশে আরেক ছেলে। আরেকটি ছবিতে দেখা যায়, মোটরসাইকেলে করে মাকে নিয়ে যাচ্ছেন ছেলে। ছেলের হাতে এখানেও ভি চিহৃ।
এই মায়ের নাম রেহেনা পারভীন (৫০)। গণমাধ্যমের খবর, আজ শুক্রবার সকালে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড থেকে ছাড়পত্র পান এই মা। এদিন দুপুর ১২টার দিকে মোটরসাইকেলে ছেলে জিয়াউল হাসানের সঙ্গে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
রেহেনা পারভীন গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমার অসুস্থতার সময় আমার ছেলে যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল, তা আমার কাছে বেঁচে ফেরার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। আমার সাহস ও মনোবল শক্ত করেছিল। করোনাকে জয় করার জন্য পরিবারের সবার সহযোগিতা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সব ছেলেরা যেনও তার মাকে এমন করে আগলে রাখে।
রেহেনা পারভীন ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সূর্যপাশা এলাকার বাসিন্দা। তিনি নলছিটি বন্দর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ১০ দিন ধরে বাড়িতে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। ১০ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা দেন। ওই দিনই তার শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। কষ্ট কমাতে অক্সিজেনের সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে আনেন ছেলে জিয়াউল হাসান। মায়ের মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেন।
তবু অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল না। এ অবস্থায় মাকে বরিশালে নিতে তিনি অ্যাম্বুলেন্স বা অন্য কোনো গাড়ির খোঁজে নামেন। যানবাহন না পাওয়ায় নিজের মোটরসাইকেলে মাকে বরিশালে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জিয়াউল। গামছা দিয়ে পিঠের সঙ্গে শক্ত করে অক্সিজেন সিলিন্ডারটি বাঁধেন। এরপর মাকে পেছনে বসিয়ে তাঁর মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরিয়ে দেন। এভাবে ১৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে গত শনিবার সন্ধ্যায় পৌঁছান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পাশে আরেকটি মোটরসাইকেলে করে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছোট ভাই রাকিব। তাদের ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন