স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছে দেশবাসী। যুদ্ধবিধ্বস্ত জনপদ চেষ্টা করছে ঘুরে দাঁড়ানোর। হয়তো কখনো পেরেছে, কখনোবা পারেনি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে দীর্ঘ ৫০ বছর পর এসে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন দৃশ্যমান। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। সেই সঙ্গে মাঝারি থেকে মেগা প্রকল্প দেশজুড়ে। এই উন্নয়ন নিয়ে সন্তুষ্টি রয়েছে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে।
সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামোতে সন্তোষজনক উন্নয়ন হয়েছে। কেবল এখন নয়, তিন-চার দশক থেকেই গ্রামীণ অবকাঠামো বা রাস্তাঘাটের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) হওয়ার পর। বেশিরভাগ গ্রামেই রাস্তা আছে। অনেক জায়গায় মহাসড়ক আছে
বর্তমানেও সরকার বাজেটের সবচেয়ে বড় অংশ খরচ করছে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে। এতে যেমন দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, বাড়ছে ও বাড়বে। বর্তমানে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতির চাকা আরও গতিশীল হবে। মেগা প্রকল্পে গুরুত্ব দেয়ার ঝুঁকির কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিঃসন্দেহে মেগা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। মেগা প্রকল্পে অত্যধিক অর্থ ব্যয় করে অন্যগুলোতে অবহেলা করলে সার্বিকভাবে যথেষ্ট উন্নতি করা সম্ভব হবে না। তাই উন্নয়ন প্রকল্পে ভারসাম্য রেখে অর্থ খরচ করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। উন্নয়নের সুফল পেতে হলে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে, সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বিডিটাইপকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে বাংলাদেশের ভৌত অবকাঠামোতে সন্তোষজনক উন্নয়ন হয়েছে। কেবল এখন নয়, তিন-চার দশক থেকেই গ্রামীণ অবকাঠামো বা রাস্তাঘাটের যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে, বিশেষ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) হওয়ার পর। বেশিরভাগ গ্রামেই রাস্তা আছে। অনেক জায়গায় মহাসড়ক আছে। দ্বিতীয়ত, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা অঞ্চলে বড় বড় অবকাঠামোসহ বেশ ভালো উন্নতি হয়েছে। বড় বড় রাস্তা এখন মোটামুটি ভালো।’
রেলের ক্ষেত্রে এখনও সন্তোষজনক উন্নতি হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বহু টাকা ব্যয় হচ্ছে কিন্তু আশানুরূপ হয়নি রেলওয়েটা। আমাদের নৌপথ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং সবচেয়ে বেশি নৌপথ ছিল। বহু আগে নৌপথই ছিল সবচেয়ে সস্তা, গুরুত্বপূর্ণ, আনাচে-কানাচে যাওয়া যেত। এখন সমস্যা হলো নদীর নাব্য, বহু খাল ভরাট করে ফেলেছে। এদিকে আমার মনে হয়, নজর একটু কমই। এটার গুরুত্বও অনেক বেশি। ব্যবসা-বাণিজ্য সবদিকেই।’
মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে জাতীয় উন্নয়নে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে পদ্মা সেতু। এটির কাজ শেষ হলে এবং যানবাহন চলাচল শুরু হলে ইস্টার্ন বাংলাদেশ আর ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পৃক্ত হবে। এটার সরাসরি উপকার আছে। প্রতিদিনই ফেরি পারাপার হওয়ার জন্য মানুষের ভোগান্তি হয়। এছাড়া দূরত্ব কমে যাবে। অনেক হিসাবে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাওয়ার সমান সময় বাঁচবে। এটা তো একটা বিরাট ব্যাপার
তিনি বলেন, ‘সড়কটা ভালো হয়েছে। রেলওয়েটা সন্তোষজক নয়, যদিও প্রচুর ব্যয় হয়েছে। নৌপথে আরও নজর দেয়া উচিত, এখানে বেশি খরচ করা হয়নি।’
সড়কের যথেষ্ট উন্নয়ন হলেও মান ভালো হয়নি বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রক্ষণাবেক্ষণও ঠিকমতো করা হয়নি। মানটা খারাপ। একটু বৃষ্টি হলেই ভেঙে যায়। গর্ত হয়ে যায় রাস্তা।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর বলেন, ‘কিছু কিছু রাস্তা আছে যেখানে কালভার্ট-সেতু তৈরি করে রাখা হয়েছে। সেগুলো সম্পন্ন করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিশেষ একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল অসম্পন্ন সেতু-কালভার্টগুলো সম্পন্ন করার। সেগুলো সম্পন্ন করলে আমার মনে হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।’
মেগা প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মেগা প্রকল্পে অত্যধিক অর্থ ব্যয় করে অন্যগুলোতে অবহেলা করলে সার্বিকভাবে যথেষ্ট উন্নতি করা সম্ভব হবে না। মেগা প্রকল্পগুলো শহরকেন্দ্রিক। শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। কিন্তু আমাদের সার্বিকভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মেগা প্রকল্প ঠিক আছে। কিন্তু এটাকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়ে অর্থ ব্যয় করলে ঠিক হবে না।’
এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বিডিটাইপকে বলেন, ‘মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে জাতীয় উন্নয়নে বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে আছে পদ্মা সেতু। এটির কাজ শেষ হলে এবং যানবাহন চলাচল শুরু হলে ইস্টার্ন বাংলাদেশ আর ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পৃক্ত হবে। এটার সরাসরি উপকার আছে। প্রতিদিনই ফেরি পারাপার হওয়ার জন্য মানুষের ভোগান্তি হয়। এছাড়া দূরত্ব কমে যাবে। অনেক হিসাবে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার কমে যাওয়ার সমান সময় বাঁচবে। এটা তো একটা বিরাট ব্যাপার।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত হলো ঢাকার মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকাবাসীর গণপরিবহনের বিরাট সমস্যার সমাধান হবে। বলা হচ্ছে যে, প্রতি ঘণ্টায় অনেক যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। বিষয়টি যদিও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করবে, তবুও যানজট এখন যা আছে তার চেয়ে কমবে, যদি আমরা সময়মতো চালু করতে পারি। একটা (এমআরটি লাইন-৬ বা উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত) যদি চালু হয়, তাহলে কিন্তু এটা উল্লেখযোগ্য। পুরোটা হলে তো কথাই নেই। তাহলে তো ঢাকার রাস্তার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণের মতো হয়ে যাবে। ঢাকার মতো নগরীতে মোট জমির অন্তত ২৫ শতাংশ সড়ক থাকার কথা, সেখানে আছে পাঁচ শতাংশের মতো। ঢাকার মতো শহরে যদি গণপরিবহনের ব্যবস্থা হয়ে যায় এবং ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা যায়, তাহলে কিন্তু ঢাকার বোঝা কমবে।’
ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর বাইরে গিয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট বলেন, ‘তৃতীয়ত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো। এগুলোর সব যদিও মেগা প্রকল্পের তালিকায় নেই। মেগার তালিকায় আছে নারায়ণগঞ্জ, মিরেরসরাই, চট্টগ্রামের আনোয়ারারটা। এগুলোতে কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অনেক আগ্রহ আছে। যে জমির সমস্যা, এটা বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় সমাধান হবে। এগুলো যদি হয়ে যায়, তাহলে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।’
সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া মেগা প্রকল্পগুলোর কিছু তথ্য তুলে ধরা হলো-
দেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেল
সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা ২০৩০ অনুসরণে ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলিত খরচে উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) লাইন-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণকাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয়পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৪২ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক (রেলকোচ) ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৪৯ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসরণে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ বর্ধিত করার জন্য সোশ্যাল স্টাডি, অংশীজন সভা ও হাউজহোল্ড সার্ভে সম্পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে বেসিক ডিজাইন ও ভূমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলমান। এ অংশের দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার।
প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা। তার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার তার রাজস্ব খাত থেকে দিচ্ছে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি ৪৮ লাখ এবং জাইকার কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ১২ হাজার ৩১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট খরচের ৫৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ অর্থ খরচ করা হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু
চলতি বছরের জানুয়ারির তথ্য তুলে ধরে আইএমইডি বলছে, বহু প্রতীক্ষার পদ্মা সেতু প্রকল্পের ৮৪ ভাগ কাজ হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত টাকা খরচ হয়েছে ২৪ হাজার ৫৩২ কোটি ৪৮ লাখ। শতাংশের হিসাবে যা ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
প্রকল্প চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু তা শেষ হচ্ছে না। এর মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার বিষয়টি অনুমোদন পর্যায়ে আছে। এ বিষয়ে সোমবার (২২ মার্চ) আইএমইডি সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী বিডিটাইপকে বলেন, ‘কয়েক দিনের মধ্যে মেয়াদ বাড়িয়ে দেব। আমরা মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে। কিন্তু কতটুকু মেয়াদ বাড়াব, সেটা এনালাইসিস করে জানিয়ে দেব। এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’
আইএমইডির এক প্রতিবেদন বলছে, পদ্মা নদীর কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২৯টি জেলা রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি যোগাযোগবিহীন অবস্থায় রয়েছে। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। পদ্মা নদীর ওপর মাওয়া-জাজিরা প্রান্তে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রোড-কাম-রেল সেতু নির্মাণ করা প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। এটি এশিয়ান হাইওয়ে রুট এএইচ-১ এর অংশ হবে এবং এর ফলে দেশের ১ দশমিক ২৩ শতাংশ জিডিপির হার বৃদ্ধি পাবে।
সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পটি সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প।’
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছর প্রকল্পটির জন্য তিন হাজার ৬৮৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে।
মোট ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা খরচে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। চীনের কাছ থেকে প্রকল্পের জন্য ঋণ নিচ্ছে ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পের জন্য মোট বরাদ্দের ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ খরচ করা হয়েছে।
দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার-গুনদুম রেল প্রকল্প
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি ২০১০ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়েছে। এটি ২০২২ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে খরচ করা হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৯১৯ কোটি ৬ লাখ এবং চীন ও এডিবির কাছ থেকে সরকার ঋণ নিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি পাঁচ হাজার ১৩৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রকল্পটির জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তার মাত্র সাড়ে ২৮ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পেরেছে সংশ্লিষ্টরা।
২০২০ সালের এপ্রিলে যখন প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়, ওইদিন তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘ইতোমধ্যে চীন থেকে মিয়ানমার হয়ে থাইল্যান্ড পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশও এ রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। এ প্রকল্পটি ফার্স্ট ট্র্যাক প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর
‘পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদির উন্নয়ন (প্রথম সংশোধন)’ প্রকল্পটি চার হাজার ৫১৬ কোটি টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালের জুনে। সেই সময়ের পর আড়াই বছরের বেশি অতিক্রান্ত হলেও এটির কাজ শেষ হয়নি। কয়েক দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত এর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রথমবার ঠিক করা মেয়াদের পর এ পর্যন্ত সময় বেড়েছে চার বছর। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৭২ শতাংশ (বাস্তব অগ্রগতি)।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্প ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পটিতে খরচ হচ্ছে দুই লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তার মধ্যে সরকার দিচ্ছে ২২ হাজার ৫২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। রাশান ফেডারেশনের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত মোট বরাদ্দের ৩৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ অর্থ খরচ হয়েছে।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প
‘মাতারবাড়ী ২x৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার’ প্রকল্পটির প্রাক্কলিত মোট ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তার মধ্যে সরকার দিচ্ছে চার হাজার ৯২৬ কোটি ৬৫ লাখ, জাইকার কাছ থেকে প্রকল্প ঋণ ২৮ হাজার ৯৩৯ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন দুই হাজার ১১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।
২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির মোট আর্থিক অগ্রগতি ১৪ হাজার ৪১১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। ভৌত অগ্রগতি ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ।
প্রকল্পটির মোট উৎপাদনক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট।
রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প
‘২x৬৬০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার’ বা রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পটি ১৬ হাজার কোটি টাকা খরচে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং ভারতের এনটিপিসি লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের আগস্টে প্রকল্পটির প্রথম ইউনিটের কমিশনিং করা হবে। দ্বিতীয় ইউনিটের কমিশনিং হবে তার ছয় মাস পরে। প্রকল্পটির এখন পর্যন্ত ৪৩০ একর ভূমি উন্নয়ন, সীমানা প্রাচীর ও স্লোপ প্রোটেকশন কাজ এবং মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফেন্সিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩৩ কেভি লাইন নির্মাণ সম্পন্ন এবং ১৩৫ কেভিএ ডিজেল জেনারেটর স্থাপন সম্পন্ন করেছে ওজোপাডিকো লিমিটেড। নির্মাণকাজের জন্য পানি প্রকল্প এলাকায় ব্যবস্থা করা হয়েছে। কয়লা সরবরাহ চুক্তির দলিল দাখিলের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন