কষ্টের অবসান ঘটাল ইংলিশরা। হ্যাঁ, চেন্নাই টেস্টে ৩১৭ রানের রেকর্ড হার যেন ইংল্যান্ডের কষ্টের অবসান, দিশেহারা অবস্থার অবসান। তৃতীয় দিন বিকেল থেকেই তো চোখে অন্ধকার দেখছিলেন রুট-স্টোকসরা। গোটা দুটি দিন ধরে এমন স্পিনিং উইকেটে দাঁড়িয়ে লড়াই করাটা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। আজ চতুর্থ দিন দেড় সেশনের মধ্যেই বাকি ৭ উইকেট হারিয়ে এক অর্থে যেন হাঁপ ছেড়েই বেঁচেছে জো রুটের দল। চেন্নাইয়ের এই হার রানের দিক দিয়ে ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হার।
তৃতীয় দিন বিকেলেই ৫৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ইংল্যান্ড। তবে উইকেটে ইংলিশদের ক্ষীণ স্বপ্ন হয়ে ছিলেন অধিনায়ক রুট। বেন স্টোকসের দিকেও তাকিয়ে ছিল দল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। ভারতের দুই স্পিনার—রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর অক্ষর প্যাটেলের ঘূর্ণিতে রীতিমতো নাকাল হলো ইংল্যান্ড-ব্যাটসম্যানরা। রুট লড়াই করেছেন বটে, কিন্তু ৯২ বলে ৩৩ রানের ইনিংসটি ভারতীয় বোলারদের খুব বেশি চিন্তায় ফেলতে পারেনি।
শেষের দিকে ‘সব হারিয়ে ঝলক’ দেখিয়েছেন মঈন আলী। ১৮ বলে ৪৩ রান করে হারের ব্যবধান কমানোর বৃথা চেষ্টা করেছেন তিনি। দুই দিন পর আইপিএলের নিলাম দেখেই কি না, গত মৌসুমের পর কোহলির দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু থেকে বিদায় নিয়ে আসা মঈন আলী এই ইনিংসের মাধ্যমে যেন আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে একটা বার্তাই দিয়ে রাখলেন!
অক্ষর প্যাটেলের অভিষেক টেস্ট ছিল এটা। শাহবাজ নাদিমের জায়গায় এবার স্পিনার হিসেবে জায়গা পাওয়া এই বাঁহাতি সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছেন পুরোপুরি। প্রথম ইনিংসে দুই উইকেট পাওয়ার পর আজ পাঁচ উইকেট—অক্ষরের এই কীর্তিই মূলত গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে। ২১ ওভার বোলিং করে ৫ মেডেনের পর ৬০ রানের বিনিময়ে ৫ উইকেট—অভিষেকে এর চেয়ে আর বেশি কী চাইতে পারেন একজন বোলার!
অশ্বিন প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। এই ইনিংসে তাঁর ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। স্পিনারদের টেস্টে বাঁ হাতি চায়নাম্যান বোলার কুলদীপ যাদব যদি উইকেট না পান, তাহলে কেমন কথা! প্রথম ইনিংসে উইকেটশূন্য কুলদীপ এবার তুলে নিয়েছেন ২ উইকেট। এই টেস্টে ১৭ উইকেট তুলে নিয়েছেন ভারতীয় স্পিনাররা।
অশ্বিন একটা আক্ষেপও কুড়িয়েছেন অবশ্য। অক্ষরের কারণে এই ইনিংসে পাঁচ উইকেট পাওয়া হয়নি তাঁর। হলে সাকিব আল হাসান, ইমরান খান, ইয়ান বোথামকে স্পর্শ করতে পারতেন। এক টেস্টে ন্যূনতম ১০ উইকেট আর একটি সেঞ্চুরি—এই কীর্তি সাকিব, ইমরান আর বোথাম ছাড়া আর আছে শুধু অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান ডেভিডসনের। দুই উইকেটের কারণে এই তালিকায় নিজের নাম তুলতে পারেননি চেন্নাইয়ের এই স্পিনার।
প্রথম ইনিংসে রোহিত শর্মার সেঞ্চুরিতে ভারত স্কোরবোর্ডে তোলে ৩২৯ রান। জবাবে ইংল্যান্ডের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ১৩৪ রানে। ১৯৫ রানে এগিয়ে থেকে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে ২৮৬ রান তুলে ইংলিশদের সামনে ৪৮২ রানের পর্বতসমান লক্ষ্য ছুড়ে দেয়। টেস্ট ইতিহাসে ৪৮২ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই কারওই। বিশ্ব রেকর্ডের চেয়েও বেশি এই লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত দাঁড়াতেই পারল না ইংলিশরা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন