রাশিয়া ও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপে সম্মত হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচক ও বিরোধী দলের নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনির ওপর দমন নীতি এবং মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে ইইউ।
গতকাল সোমবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও ইইউ মিয়ানমারের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করবে না। কারণ এটা সাধারণ মানুষকে আঘাত করতে পারে।
পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রজোট হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ঐকমত্য অর্জন করা সব সময় যে সহজ হয়, তা নয়। তবে রাশিয়া ও মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতির আলোকে এই দুই দেশের ওপর শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রশ্নে তেমন মতভেদ দেখা যাবে না।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার স্পষ্ট রূপরেখা তুলে ধরা হবে। আগামী মাসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে সেই ঘোষণা আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে আরও সমন্বয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যৌথ উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে। গতকাল মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা করেছেন ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ইইউ’র সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর ধরে অবনতির দিকে। ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাতের জের ধরে ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করার পর রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইইউ। সম্প্রতি রুশবিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির বিরুদ্ধে মস্কোর পদক্ষেপগুলোর কারণে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। নাভালনির বিরুদ্ধে আদালতের সর্বশেষ রায়কেও রাজনৈতিক হিসেবে বিবেচনা করছে ইইউ। সংলাপের মাধ্যমে মতবিরোধ মেটানোর প্রচেষ্টাও বিফল হয়েছে। ইইউ পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের মস্কো সফরের সময় রাশিয়া ইইউ দেশের কয়েকজন কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা করায় ব্রাসেলসে ক্ষোভ আরও বেড়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার কিছু শীর্ষ কর্তাব্যক্তির ইউরোপে প্রবেশ, ইউরোপে তাদের সম্পদের নাগালের মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে ইইউ। সেই সঙ্গে বেলারুশে রাশিয়ার নীতি ও নাভালনির সমর্থকদের ওপর দমননীতির কারণে এই প্রথম মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে যাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির এনএলডি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। নির্বাচনে জয়ী হয়ে তার দলের সরকার গঠনের কথা থাকলেও সেনাবাহিনী তা আটকে দিয়েছে। নির্বাচনের পর থেকেই মিয়ানমার সেনাবাহিনী জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছে। এই অভিযোগ এনেই মূলত ক্ষমতা দখলের সাফাই গেয়ে আসছে সেনাবাহিনী। কিন্তু ভোট জালিয়াতির কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই প্রতিবাদ মিয়ানমারে বিক্ষোভ চলছে। আটক করা হয়েছে সু চিসহ তার দল এনএলডির অনেক নেতাকে। দেশটিতে আগামী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে সেনা শাসনবিরোধী বিক্ষোভ দমনে আইন সংশোধন করেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। কেউ সশস্ত্র বাহিনীর কাজে বাধা দিলে ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এছাড়া নতুন আইনে কেউ অভ্যুত্থানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে ‘ঘৃণা বা অপমানসূচক’ কিছু প্রকাশ করলেই দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড বা মোটা অংকের জরিমানার মুখে পড়তে পারেন বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
সূত্র : আল জাজিরা ও ডয়েচে ভেলে
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন