শরীয়তপুর সদর পৌরসভায় যৌতুক ও দাম্পত্য কলহের জেরে এক গৃহবধূকে নির্যাতনের পর চুল কেটে দিয়েছেন তার স্বামী। নির্যাতনের কারণে ওই গৃহবধূ চোখে দেখতে পারছেন না।
১৫ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের হুগলি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর বাবা তিনজনকে আসামি করে সদরের পালং মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ আনিকা আক্তারকে তার বাবার বাড়ি থেকে ঢাকা শেরেবাংলা নগর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। সদর পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের স্বর্ণঘোষ গ্রামের আবু তালেব খান ও ফাহিমা বেগম দম্পতির বড় মেয়ে তিনি। তারা এক ভাই এক বোন।
থানায় অভিযোগ অনুসারে, পৌরসভার ৬নম্বর ওয়ার্ডের হুগলি গ্রামের আলী আহাম্মদ মোল্লার ছেলে সাদ্দাম হোসেন মোল্লার সঙ্গে ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর আনিকা আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সাদ্দাম ঢাকা ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করছেন।
বিয়ের পর থেকে যৌতুকসহ বিভিন্ন অজুহাতে আনিকাকে মারধর করে আসছেন তার স্বামী সাদ্দাম হোসেন, শ্বশুর আলী আহম্মদ ও শাশুড়ি রোকেয়া বেগম। ১৫ ফেব্রুয়ারি সাদ্দাম আনিকাকে বাবার বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকা আনতে বলেন। আনিকা টাকা আনতে অস্বীকার করলে স্বামী, শ্বশুর- শাশুড়ি তাকে লাঠি দিয়ে বেদম পেটায়। একপর্যায়ে সাদ্দাম আনিকার চুলের মুঠি ধরে ওয়ালের সঙ্গে আঘাত করতে থাকেন। এসমাই আনিকা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে মাথার যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকেন তিনি। এরপর কাঁচি দিয়ে আনিকার মাথার চুল কেটে দেন সাদ্দাম। আনিকা ভয়ে এ বিষয়ে বাবা-মাকে কিছু বলেননি।
অপরদিকে ক্রমেই আনিকা চোখে ঝাপসা দেখতে শুরু করেন ও তার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়। বিষয়টি জানতে পেরে আনিকাকে তার বাবা আবু তালেব খান উদ্ধার করে ৩ মার্চ গোপালগঞ্জ শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আই হসপিটাল এন্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান। সেখান থেকে চিকিৎসক তাকে ঢাকা শেরেবাংলা নগর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রেরণ করেন। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করাতে বলেন।
শুক্রবার আনিকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে রাতে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে আবার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেয়া হয়। এখন চোখে দেখতে পারছেন না আনিকা। তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছেন।
আনিকার মা ফাহিমা বেগম বলেন, সাদ্দাম ও তার মা-বাবা মিলে আমার মেয়েকে নির্যাতন করেছে। আমার মেয়ে এখন চোখে দেখে না। মেয়ের মাথার চুল কেটে দিছে। শরীর ও মাথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি। মেয়ের অবস্থা খুবই খারাপ। ওরা আমার মেয়ের অবস্থা এরকম করেছে। মেয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। আমি এর বিচার চাই।
আনিকার বাবা আবু তালেব খান বলেন, চাকরি ও বাড়ি করবেন বলে সাদ্দামও তার পরিবার আমার মেয়ের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা চায়। মেয়ে বলছে, বাবা গরিব সামান্য ছোট একটি দোকান করে। এতো টাকা পাবে কোথায়? বলার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের স্বামী সাদ্দাম, শ্বশুর আলী আহম্মদ ও শাশুড়ি রোকেয়া আনিকাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে সাদ্দাম আনিকার চুলের মুঠি ধরে ওয়ালের সঙ্গে মাথা টাকাতে থাকেন। মেয়ে ভয়ে আমাদের কিছু বলেনি। মেয়ের মাথার সুন্দর চুলগুলোও কেটে ফেলেছে। জানতে পেরে উদ্ধার করে চিকিৎসা করাচ্ছি। ওরা দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে নির্যাতন করে আসছে।
এদিকে, নির্যাতনের বিষয়ে অস্বীকার করে অভিযুক্ত সাদ্দাম হোসেন মোল্লা মুঠোফোনে বলেন, আমি কেন আমার স্ত্রীকে মারধর করবো? কেনইবা চুল কাটবো! আমি শুনেছি আমার স্ত্রী অসুস্থ। তাই শ্বশুরের মোবাইলে বারবার ফোন দিচ্ছি, কিন্তু তিনি ধরছেন না।
শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ওসি মো. আসলাম উদ্দিন বলেন, গৃহবধূর নির্যাতনের ঘটনায় শুক্রবার রাতে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন