ইন্টারনেট এখন যেমন আছে তেমনই থাকবে

ইন্টারনেট এখন যেমন আছে তেমনই থাকবে
তিন মোবাইল অপারেটর বিনামূল্যে সাময়িক যে তরঙ্গ বরাদ্দ চেয়েছিল, তা তারা পাচ্ছে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বিডিটাইপকে বলেছেন, এর বদলে সরকার তরঙ্গের নিলাম আগেভাগে করা ও দাম কিছুটা কম রাখা যায় কিনা, সেটা ভাবছে।ফলে আপাতত ইন্টারনেট সেবার মান এখন যা আছে সেটাই থাকবে। এর চেয়ে উন্নত হবে না। করোনাভাইরাস ঠেকাতে দেওয়া সাধারণ ছুটির মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিন অপারেটর রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক সরকারের কাছে বিনামূল্যে তরঙ্গ চেয়েছিল।তাদের যুক্তি ছিল, সরকারের অনুরোধে গ্রাহকের জন্য তারা ইন্টারনেটের দাম বেশ কমিয়েছে। এখন সরকার বিনামূল্যে কিছুটা তরঙ্গ বরাদ্দ দিলে সেবার মান উন্নত করা যায়। অপারেটরেরা এও বলেছিল যে, কথা বলা বা ভয়েস কল কমে যাওয়া ও ইন্টারনেটের দাম কমানোর পর সব মিলিয়ে রাজস্ব কমে যাওয়ায় তাদের পক্ষে এখন উচ্চমূল্যে তরঙ্গ কেনা সম্ভব নয়। এ ছাড়া সরকারের কাছে যে তরঙ্গ পড়ে আছে, তা কোনো মূল্য সংযোজন করছে না বলেও মন্তব্য ছিল অপারেটরদের।আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার বিডিটাইপকে বলেন, 'বিনামূল্যে তরঙ্গ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কোনো অবস্থাতেই সেটা আমরা করতে পারি না। কাজটি করতে গেলে অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে। এই অবস্থায় সেটা সম্ভব হবে না।' মন্ত্রী বলেন, 'দ্বিতীয় কারণটি কারগরি। এখন যদি আমরা তরঙ্গ দিইও, সেটা যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো বসিয়ে কাজে লাগাতে তিন মাসের মতো সময় লেগে যাবে।'অবশ্য অপারেটরেরা এর সঙ্গে এক মত নন। তারা জানিয়েছে, তরঙ্গ দিলে সেটা এক সপ্তাহের মধ্যে গ্রাহকদের সুবিধায় ব্যবহার করা যাবে।দেশে করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি শুরু হয়। এরপর ইন্টারনেটের ব্যবহার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির খবর জানিয়েছিল রবি আজিয়াটা। গ্রাহকসংখ্যায় শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির কথা জানালেও শতকরা হার জানায়নি। বাংলালিংকও ব্যবহার বৃদ্ধির কথা জানায়। মান কমেছে বাড়তি চাপে ইন্টারনেট সেবার মান কমে যায়। বিশেষ করে বড় শহরের বাইরে আগের চেয়ে সেবার মান ওঠানামার কথা স্বীকার করেছিল সবাই।হংকংভিত্তিক টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক পর্যবেক্ষণ প্রতিষ্ঠান ওপেন সিগন্যাল লকডাউনের সময় ইন্টারনেটের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ৮ এপ্রিল। এতে দেখা যায়, ২৭ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোবাইল ফোনে চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর–জি) ইন্টারনেট সেবার গড় ডাউনলোড গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ৯ মেগাবাইটের বেশি। ৮ মার্চ দেশে করোনা–আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ইন্টারনেটের গতি কমতে থাকে, মার্চের শেষ সপ্তাহে যা নেমেছে ৭ দশমিক ৮ মেগাবাইটে। অপারেটর সূত্র জানায়, করোনায় ব্যবহার বৃদ্ধির পর সরকারের অনুরোধে তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের দাম কমানো অথবা বাড়তি ডেটা দেওয়া শুরু করে। অপারেটরগুলো সবাই মিলে সরকারের কাছে বিনামূল্যে তরঙ্গ চাওয়ার বিষয়টি আলোচনা করে।গ্রামীণফোন দাবি করেছে, তারা বিনামূল্যে চাওয়ার পক্ষপাতি নয়। ফলে রবি, বাংলালিংক ও টেলিটক মিলে গত ১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) বিনামূল্যে তিন মাসের জন্য তরঙ্গ চেয়ে চিঠি দেয়। এতে সাময়িক রাজস্ব ভাগাভাগি থেকেও ছাড় চাওয়া হয়। অপারেটরেরা এখন তাদের রাজস্বের সাড়ে ৬ শতাংশ সরকারকে দেয়। বাংলাদেশে মুঠোফোন গ্রাহক অনুযায়ী যে পরিমাণ তরঙ্গ দরকার, তা অপারেটরদের নেই বলে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি অভিযোগ করে থাকে। অন্যদিকে অপারেটরদের দাবি, তরঙ্গের দাম সরকার এত বেশি নির্ধারণ করে যে, তা কিনে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা করা কঠিন। দরকারের চেয়ে তরঙ্গ কম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবেশি ও সমপর্যায়ের অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশেই তরঙ্গ পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। মানে হলো, এ দেশে তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক বেশি, যা সেবার মান কমিয়ে দেয়। যেমন, বাংলাদেশে প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের বিপরীতে গ্রাহক ১২ লাখ ৯০ হাজারের মতো। পাকিস্তানে তা ১২ লাখ ৩০ হাজার, মিয়ানমারে ৪ লাখ, থাইল্যান্ডে ২ লাখ ৮০ হাজার। বিটিআরসির হিসাবে, ফেব্রুয়ারি মাস শেষে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮৪ হাজার। তাদের মধ্যে ৯ কোটি ৪২ লাখ মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাকিরা অন্যান্য মাধ্যমে।২০১৮ সালে দেশে ফোর-জি চালু করার জন্য তরঙ্গ নিলাম করেছিল বিটিআরসি। এতে তিনটি ব্র্যান্ডের মোট ৪৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়। এর মধ্যে মাত্র ৩৩ শতাংশ বা ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়। বাকি দুই-তৃতীয়াংশ তরঙ্গ বিক্রি না হওয়ার মূল কারণ উচ্চ মূল্য বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। বিনামূল্যে তরঙ্গ চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত বিডিটাইপকে বলেন, 'যখন করোনা প্রতিরোধে নানাভাবে আমরা সরকারকে সহায়তা করছি, তখন বিনামূল্যে তরঙ্গ চাওয়ার বিষয়টি আমরা সমর্থন করতে পারি না। আমরা চাই দুই পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক কোনো পদক্ষেপ। মূল্যছাড় দিয়ে তরঙ্গ দিলে সরকারের কোষাগারেও কিছু অর্থ যাবে।'

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password