লকডাউনে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ভোলার নিম্ম আয়ের জনগোষ্ঠি

লকডাউনে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন ভোলার নিম্ম আয়ের জনগোষ্ঠি

ভোলা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনের জেলা, যার সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হল নদী পথ। এই জেলার মোট জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ নিম্ম আয়ের, এরা বেশির ভাগ দিনমজুর।  করোনাকালে লকডাউনের কারনে চরম বিপাকে পড়েছেন জেলার এই বিশাল জনগোষ্ঠী। ভালো নেই জেলার বেশির ভাগ মানুষ। করোনা মহামারিতে লকডাউনে কাজ না থাকায় নেই কোন ইনকাম। আর ইনকাম না থাকায় পরিবারের ভরন পোষনে হিমশিম খেতে হচ্ছে পরিবারের কর্ত ব্যক্তি কে, তার উপর আছে বিভিন্ন এনজিওর কিস্তির টাকা আদায়। একদিকে মানুষ খেতে পারছে না, অন্য দিকে এনজিও গুলো টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই চরম দুরভোগে জীবন যাপন করছেন এই মানুষ গুলো।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে গত ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে দেশব্যাপী শাটডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধ। এ বিধিনিষেধ যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে জেলার সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর উপর। 

আজ মঙ্গলবার (৬ জুলাই) সকালে সরজমিনে গিয়ে, ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পোলঘোরা নামক স্থানে কয়েক জন নিম্ম আয়ের মানুষের সাথে কথা বলা হয়। তাদের কাছে জানতে চাই কেমন কাটছে তাদের দিন, জবাবে বারেক (২৮) নামে এক ব্যক্তি জানান,  এখন দি‌নে ১ টাকা ও কামাই নাই অথচ প্রতিদিন সংসারে খরচ লাগছে ৩০০/৪০০ শত টাকা। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ,, কইথ থেকে পাই এতো টাকা বলেন,  ইদ্রিস (২৫) নামে একজন বলেন আমরা সারা দিন কাজ করে রাতে বাজার করে আনি,সে গুলো রাতে রান্না করে খাই। সরকার লকডাউন দেওয়াতে এখন কাজ নেই, কি করি বলেন।

এ নিয়ে কথা বলার জন্য ভোলা সদর উপজেলার জেলে পল্লী গুলোতে গেলে সেখান থেকে পাওয়া যায় আরো গুরুত্বপূর্ন তথ্য।

জেলে পরিবার গুলো নদীতে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় অনেক সময় ধরে তাদের আয় রোজগার নাই। এখন অভিযান শেষ হলে ও নদীতে নেই ইলিশের দেখা। তার উপর দেশে চলছে লকডাউন, এ যেনো জীবন্ত মানুষ কে যেন্ত মাটি চাপা দেওয়ার মত। নাছির মাঝি মাছ ঘাট এলাকার আকবর মাঝি (২৩) বলেন কি বলবো ভাই, আজ দুইদিন এক বেলা ভাত খেয়ে আছি, কি করবো বলেন আমাদের তো দেখার মত দেশে কেউ নেই। নুরনবী মাঝি (৩৬) নামে আরেক জন বলেন সমিতি থেকে টাকা নিয়ে নৌকা ঠিক করছি, কিন্তু এখন নদীতে মাছ নাই, তার উপর দেশে চলে লকডাউন, কেমনে কি করবো বলতে পারেন। সরকার তো আমাগোরে চোখে দেখে না, দেখে বড় মিয়াগোরে।

সদর উপজেলার তুলাতুলি এলাকার বেড়ি বাধ এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বসে বসে অলস সময় পাড় করছে স্থানীয় কিছু মানুষ, তাদের কাছে জানতে চাই বসে আছে কেন, সাথে সাথে মুছা কালিমুল্লাহ (২৭) নামে একজন বলেন কি করবো সরকার দেশে লকডাউন দিছে, তার জন্য আমরা কোন কাজ করতে পারছি না, তাই বসে বসে সময় কাটাচ্ছি। সাদ্দাম। (২৪) হোসেন বলেন আমরা করোনাকে ভয় পাইনা ভয় পাই লকডাউন কে, কারন জানতে চাইলে সে জানায়, করোনায় মারা যাওয়া থেকে বেশি মারা যায় খুদার জালায়, তাই করোনার চেয়ে বেশি ভয় পাই লকডাউন কে। বশির আহম্মেদ (৪৮) বলেন আমার সংসা‌রে র‌য়ে‌ছে ৬ জন সদস্য, কেমনে এই ৬ জনের পরিবার চালাই বলেন, ধার দেনা করে আর কত, এখন দার ও দিতে চায় না কেউ। চরম কষ্টে জীবন কাটাচ্ছি যা আপনাকে বলে বুঝাতে পারবো না বলেই কান্না শুরু করে দেন এই মানুষ টি। তিনি আরো বলেন কিছু‌দিন হ‌লো লকডাউনের জন্য বের হই না তেমন, এতে কামাইও হয় না। এখন কি করে সংসার চালামু সে চিন্তায় রাতে ঘুম আসে না চোখে। 

এমন ক‌রেই অসহায়ত্ব প্রকাশ ক‌রেন রিক্স চালক রাকিব হোসেন (২৮) ও কামাল (৩৫) নামের দুই ব্যক্তি। গত কয়েক বছর বোরাক চালিয়ে সংসার চালান মোঃ জিলন,(২৩) আব্দুল খালেক (৩২)ও আল্লাউদ্দিন (৩১)। তারা বলেন, সরকারী চাকরিজিবী গো তো কোন সমস্যা নাই, তারা তো মাস শেষে বেতন পায়। লকডাউন তো হলো গরিব মারার জন্য, এরকম প্রতিদিন কষ্ট না দিয়ে আমাদের গুলি করে একসাথে মেরে ফেলতে বলেন তাও ভালো, প্রতিদিন কষ্ট থেকে বেচেঁ যাবো। কয়েক দিন ধরে কোন ভাড়া নাই রোড়ে,  লকডাউনে লোকজন বাহিরে বের হয় না,গাড়ি চলে না। সফিজল (৩৬) বলেন আমার চার জন ছেলে-মেয়ে কি ভাবে কি করতাম কন।

শহর ঘুরে ও বিভিন্ন সুত্র থেকে জানা যায়, জেলায় বে‌শির ভাগ মানুষের কোন  কাজ না থাকায় অলস সময় পার কর‌ছেন। আবার কেউ কেউ অভাবের তাড়নায় জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন রকমের অপরাধের সাথে। 

স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানান সাধারন খেটে খাওয়া মানুষ গুলো গতবছর ক‌রোনার শুরু‌তে কিছু খাদ্য সহ‌ায়তা পে‌লেও এবছর কোনো সহ‌ায়তা পায়নি। তাই বাধ্য হ‌য়ে লকডাউনের ম‌ধ্যে কাজের জন্য বের হতে হয় তাদের, তবে বের হয়ে পড়ছেন আরো বিপাকে, কারন প্রশাসনের সামনে পড়লেই গুনতে হচ্ছে জরিমানা, জরিমানা না দিতে পারলে থাকছে মাইর ও কারাদন্ড। সব মিলিয়ে তারা আছে পড় বিপদে।

এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা বলেন সরকা‌রের উচিত দেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে আর কিছু না হউক খাদ্য সহায়তা প্রধান করা। তারা বলেন আমরা সরকারের কাছ থেকে এই নিম্ম আয়ের মানুষের জন্য সহ‌যো‌গিতা কামনা করছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password