রংপুর প্রতিনিধিঃ- নাগেশ্বরীতে সাড়ে ৩ বছরের এক শিশুকে ব্রিজ থেকে ১শ ফুট নীচে নদীতে ফেলে দিয়েছে মানসিক বীকারগ্রস্থ এক মা। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সেই শিশুকে। বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়ন বাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটনা।
স্থানীয় সফিকুল জানায়, বেরুবাড়ী বাজার সংলগ্ন ছড়ার পাশে তার বাড়ি। বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সে সন্তানকে নিয়ে সেখানে ঘুড়ি উড়াচ্ছিল। এসময় তিনি এক কন্যা সন্তানকে নিয়ে এক মহিলাকে বেরুবাড়ী ছড়ার উপর ব্রিজে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। হঠাৎ তিনি পানিতে কিছু একটা পড়ার শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখেন ওই মহিলা তার সন্তানকে ব্রিজ থেকে পানিতে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে হেটে সামনে যাচ্ছেন।
তিনি দৌড়ে গিয়ে দ্রুত পানিতে নেমে বাচ্চাটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেন। চিৎকার করে আশেপাশের লোকজন ডেকে ওই মহিলাকে আটকাতে বলেন। পরে আটক ওই মহিলাকে অসংখ্যবার জিজ্ঞেস করার পরেও তার নিকট কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তবে শিশুটি বার বার বলেছে তার বাড়ি বালাবাড়ি। আমার আম্মাকে কেউ মারেন না। সেখান থেকে সকলেই মা ও শিশুটিকে বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে নিয়ে গেলে চেয়ারম্যান আব্দুল মোত্তালেব বিভিন্ন জায়গায় ফোন করে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হন।
পরে জানা যায়, ওই মহিলার নাম লায়লা বেগম (৩৬)। তিনি পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের অনন্তপুর বালাবাড়ী গ্রামের খোরশেদ খোকন মিয়ার স্ত্রী। তাদের তিন কন্যা সন্তান। বড়টির নাম খুশি পারভীন (১৯), তার ছোট হাসি খাতুন (৯), আর পানিতে পড়ে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া ছোট মেয়েটির নাম সৌমি খাতুন। তার বয়স ৩ বছর ৬ মাস। পরে তার বাড়ীতে খবর দেওয়া হলে বিকেলে মা ও সন্তানকে নিতে ছুটে আসেন তাদের পরিবারের লোকজন। বাবা খোরশেদ খোকনকে দেখে তার কোলে উঠে বসেন শিশু সৌমি। তাকে কোলে নিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেন তিনি। তার পাশেই নির্বিকার বসে ছিলেন মানসিক বীকারগ্রস্থ লায়লা বেগম। বাবার কোলে বসেই শিশুটি পরিবারের লোকজনকে একে একে চিনিয়ে দিচ্ছেন।
এসময় খোরশেদ খোকনের ভায়রাভাই একই এলাকার গোলাম রব্বানী জানান, দ্বিতীয় কন্যা সন্তান হাসি খাতুনের জন্ম দেয়ার পর থেকে লায়লার মাথার সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসায় কিছুটা উন্নতি হলেও পুরোপুরি সেরে ওঠেনি। তখন থেকেই ইচ্ছে হলে কথা বলেন। না হলে চুপচাপ থাকেন। তারপর তৃতীয় কন্যা সন্তান জন্ম দেন। তবে আজকের মত আগে কখনো এমনটি করেননি। আজ দুপুরে লায়লার বড় মেয়ে খুশি তাকে ফোন করে জানায় সকালে তার মা ওই গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম কাশেম বাজার এলাকায় নানা আহম্মদ আলীর বাড়ী যাওয়ার কথা বলে বের হলেও তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকক্ষণ পর্যন্ত চলে আশে পাশের গ্রামে খোঁজাখুঁজি। একসময় বেরুবাড়ী এলাকার জনৈক ইব্রাহিমের ফোন পেয়ে এ ঘটনা জানতে পেয়ে পরিবারের অন্যান্যদের সাথে তাদের নিতে এসেছেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোত্তালেব মা ও মেয়েকে পরিবারের কাছে তুলে দেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোত্তালেব জানান, কোনো সুস্থ্ মানুষের পক্ষে তার সন্তানকে ব্রিজ থেকে পানিতে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। মানসিক বীকারগ্রস্থ হওয়ায় ওই মহিলা এ কাজটি করেছেন। পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে তার মানসিক সমস্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি।
নাগেশ্বরী থানার এএসআই বিনয় চন্দ্র জানান, অভিযোগ না থাকায় মা ও শিশুকে তার স্বামী ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া নাগেশ্বরী থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রওশন কবীর এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন