সাইদুল আলম লিটন মোল্লা বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর ভাতিজা জাহিদ হোসেন জয় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) কাছে চরআইচা গ্রামের বাসিন্দা তাঁরা। অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা এলাকার বহু অপকর্মের মূল হোতা।
ববির শিক্ষার্থীদের কাছে আতঙ্কের নাম। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জাহিদ ববির ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন আর লিটন মোল্লা তাঁকে প্রশ্রয় দিতেন। তাঁদের হাতে এলাকায় প্রায়ই হেনস্তার শিকার হতো শিক্ষার্থীরা; এ পর্যন্ত শতাধিক শিক্ষার্থী নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার জাহিদ ও তাঁর লোকজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ বর্ষের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি এবং তাঁকে ও তাঁর স্বামীকে মারধর করেন। পরে লিটন ও তাঁর লোকজন ওই ছাত্রী ও তাঁর স্বামীকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় মামলা করেন ছাত্রীর স্বামী। বুধবার রাতে মাদারীপুর থেকে জাহিদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে ছাত্রী ও তাঁর স্বামীকে হেনস্তার খবরে ওই দিনই ববির শিক্ষার্থীরা লিটন ও জাহিদের বাড়িঘরে হামলা করে ভাঙচুর চালান। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার আদালতে মামলা করেছেন লিটনের স্ত্রী লুত্ফুর নাহার কাজল। এতে ওই ছাত্রীর স্বামীসহ অচেনা ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে। জাহিদের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২০ জন ছাত্রী।
এর মধ্যে দুইবার (২০১৭ ও ২০১৮ সালে) একই ধরনের ঘটনা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লিটন-জাহিদ ও তাঁদের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়েছিল। অনেক অপ্রীতিকর ঘটনার বিচার চেয়েও পাননি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। বেশির ভাগ ঘটনাই লোকলজ্জার ভয়ে চেপে গেছেন তাঁরা। স্থানীয়দের সঙ্গে ঝামেলা বাড়তে পারে বলে শিক্ষার্থীরা মার খেয়েও হজম করেছেন। স্থানীয় লোকজন, শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম ও অন্য শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সীমান্তসংলগ্ন আনন্দবাজার, কীর্তনখোলা নদীর তীর ও শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতু এলাকায় বিকেল বা সন্ধ্যায় ঘুরতে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা।
এ সময় জাহিদের নেতৃত্বে লিটনের লোকজন ছাত্রছাত্রীদের মারধর, যৌন হয়রানিসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করতেন। কখনো কখনো লিটন মোল্লাকে খবর দিয়ে ঘটনাস্থলে এনে ছাত্রছাত্রীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা, মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেওয়া হতো। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক ব্যক্তি জানান, জাহিদ ছোটকাল থেকেই বখাটে ও নেশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন। অভিযোগ রয়েছে, আনন্দবাজারের শেখ রাসেল ক্লাব ও সুকান্ত আবদুল্লাহ পাঠাগার লিটন ও জাহিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তাঁরা ও তাঁদের অনুসারীরা এখানে আড্ডা দিতেন। জাহিদ নেশাজাতীয় দ্রব্যও পান করতেন। এখান থেকে অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করতেন চাচা-ভাতিজা। মঙ্গলবার ববির শিক্ষার্থীরা এখানেও ভাঙচুর চালান। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, জাহিদ প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন দোকানগুলোতে বসে চা ও সিগারেট খেতেন আর আড্ডা দিতেন। ছাত্রীদের যৌন হয়রানি করতেন। কখনো শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিতেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভয়ে কিছু বলতেন না। আর এসবে মদদ দিতেন লিটন মোল্লা।
স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এসেছে। তাদের সঙ্গে এলাকাবাসীর কোনো দ্বন্দ্ব নেই। কিন্তু লিটন মেম্বার ও তার ভাতিজা বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্যের অনুসারী হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপরও সেই প্রভাব বিস্তার করতে চায়। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঝামেলা করলে তার প্রভাব যে পুরো গ্রামবাসীর ওপর পড়ে, সে বিষয়টি তারা মাথায় রাখে না। আমরা এলাকাবাসী এর সমাধান চাই।’ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ‘ইউপি সদস্য সাইদুল আলম লিটনের আচরণ জনপ্রতিনিধিসুলভ নয়।
আমরা এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে লিটন মোল্লাকে মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘লিটন ও জাহিদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, আমরা তা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব। ওই মামলায় জাহিদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। পরে যাতে এ ধরনের ঝামেলার সৃষ্টি না হয়, সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন