ময়লা-আবর্জনায় ঠাসা জায়গাটি এখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। রঙ চটা ও ধুলাবালি-ময়লায় আবৃত দেয়ালটাও আজ চকচকে। দীর্ঘদিন অযত্নে থাকা দেয়ালটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘একুশ’! আর এই ‘একুশের’ শরীরে শোভা পাচ্ছে ‘জ্ঞানের ভাণ্ডার’। যার নাম ‘একুশ উন্মুক্ত পাঠাগার’।
এই পাঠাগার থেকে বই নিতে টাকা লাগবে না। যে কেউ এসে বই নিয়ে যেতে পারবেন। বই পড়া শেষ হলে আবার ফেরত দিয়ে যেতে পারবেন। এ পাঠাগারে বাংলা ভাষা ছাড়া অন্য কোনো বই রাখা হবে না। যারা বই নেবেন বা রেখে যাবেন তাদের নাম-ঠিকানা লেখার জন্যও কোনো রেজিস্ট্রার বা খাতা নেই।
মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসার সামনে ছিল ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। সেই ময়লার স্তূপকে পরিষ্কার করে ভাষার মাসে নান্দনিক দেয়ালে গড়ে তোলা হয়েছে ‘একুশ উন্মুক্ত পাঠাগার’। ময়লার স্তূপ পরিষ্কার করে এমন মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনদীপ ঘরাই। ইউএনওর এমন নান্দনিক চিন্তাভাবনায় মুগ্ধ উপজেলাবাসী।
জ্ঞানকে পরিশীলিত, শাণিত এবং সমৃদ্ধ করতে ব্যতিক্রমী পাঠাগারটি গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনদীপ ঘরাই।
তিনি বলেন, এই উদ্যোগ জনগণের সঙ্গে প্রশাসনের সম্পর্ককে উন্নত করবে। ভাষার মাসে ভাষাকে নতুন করে জানতে পারবে শরীয়তপুরের মানুষ। জেলায় এ ধরনের পাঠাগার এই প্রথম। অনন্য এই উদ্যোগটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ুক এটাই হলো মূল বিষয়। কর্মসূত্রে দেশের যেখানেই গেছি সেখানেই কিছু না কিছু করতে চেষ্টা করেছি। এ ধরনের আরও ভালো কাজ অব্যাহত থাকবে।
পাঠাগারের সামনে থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, বই পেয়ে খুবই আনন্দিত তারা। এর আগে কখনও এ ধরনের লাইব্রেরি দেখেনি। তারা বলেন, লাইব্রেরিগুলোও বেশির ভাগ সময় থাকে বাসাবাড়ি থেকে দূরে। সেখানে তাদের সব সময় যাওয়া হয় না। গেলেও থাকে ভিড়, এখানে এ ধরনের কোনো ঝামেলা নেই।
স্থানীয়রা বলেন, এটা একটা মহৎ উদ্যোগ। দূরে লাইব্রেরিতে গিয়ে বই পড়া হয় না। সেখানে সব সময় যাওয়াও হয় না। তাই এ ধরনের উন্মুক্ত লাইব্রেরি হওয়াতে সহজেই বই পড়া যাবে। প্রতিটি উপজেলায় এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
মুটিভেশন প্রেজেন্টার সোলাইমান সুখন বলেন, ‘আমাদের চারপাশ সাজাতে হবে বইয়ের রাজ্যে। তারুণ্যের শক্তিকে আরও বেগবানের জন্য বইকে করতে হবে নিত্যসঙ্গী। এ লাইব্রেরির মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। যেখানে ছিল ময়লার স্তূপ সেখানে আজ বইয়ের লাইব্রেরি, এটা সত্যিই দাগ কাটার মতো।’
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান জানান, শরীয়তপুর একুশের চেতনাকে ধারণ করে এই ব্যতিক্রমী নান্দনিক উন্মুক্ত পাঠাগারের সৃষ্টি, এই একুশে লাইব্রেরির মাধ্যমে নতুন একটি একুশের মাত্রা যোগ হলো শরীয়তপুরে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন