সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে মানুষের অসচেতনতায় যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জেলাজুড়ে বায়ু দূষণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা। কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে আসা লোকজনের চাপও বেড়েছে।
জানা গেছে, ২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের কারণে জেলায় যক্ষ্মা পরীক্ষা কম হওয়ায় রোগীর শনাক্তের সংখ্যাও কম ছিল।
মূলত অসচেতনতা ও অতিরিক্ত তামাক চাষ, ইটভাটা ও বুড়িমারী স্থলবন্দরে পাথর ভাঙার কাজ করায় এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তবে যক্ষ্মা ভয়ানক রোগ হলেও বর্তমানে বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পাওয়ায় মানুষে মাঝে আতঙ্ক কেটে গেছে।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৬৬৫ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৯১৯ জন। ২০২১ সালে ইতোমধ্যে যক্ষ্মা আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েক বছরের তুলনায় ১০ শতাংশ বেড়েছে।
জেলায় যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ৬৫ জন। জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে লালমনিরহাট সদরে যক্ষ্মায় আক্রান্ত ৩১৬ জন, আদিতমারী উপজেলায় ২৪১ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ২২০ জন, হাতীবান্ধা উপজেলায় ১৯৩ জন ও পাটগ্রাম উপজেলায় ২১৪ জন।
জেলায় যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে ৭টি। এর মধ্যে ৫ উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও লালমনিরহাট সরদ উপজেলার গোকুন্ডা (এফডাবলুসি) স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কালীগঞ্জ উপজেলায় চন্দ্রপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যক্ষ্মার চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে বিনামূল্যে কফ পরীক্ষা, রোগ নির্ণয়সহ যক্ষ্মার চিকিৎসা ও ওষুধ দেয়া হয়। স্বল্পমেয়াদী ও সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
হাতীবান্ধার বড়খাতা ইউনিয়নের দোলাপাড়া গ্রামে যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী জাহেদা বেগম (৬০) বলেন, দু’মাস আগে যক্ষ্মা ধরা পড়ে। সেই থেকে বিনামূল্যে ওষুধ পেয়ে প্রতিদিন সকালে তিনটি করে বড়ি খাচ্ছি। আল্লাহর রহমতে এখন একটু ভালো আছি।
হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির স্বাস্থ্য সহকারী কর্মী মোর্শেদা বেগম বলেন, গ্রাম এলাকার মানুষ বিড়ি ও জর্দা খাওয়ার ফলে জর্দা রোগটি বেশি হয়। এই রোগীকে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসা করেন। প্রতিটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে যক্ষ্মারোগী বের করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে কফ পরীক্ষা করা হয়। পরে তাদের ফ্রি ওষুধ ও চিকিৎসা প্রদান করা হয়।
লালমনিরহাট আরডিআরএস বাংলাদেশের প্রজেক্ট অফিসার মো. শাহ জালাল মিয়া বলেন, যক্ষ্মারোগীদের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও রোগীদের ৬ থেকে ১২ মাস পর্যন্ত ওষুধ প্রদান করা হয়।
লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, জেলায় যক্ষ্মারোগীর সংখ্যা বাড়লেও যক্ষ্মা নিয়ে এখন আর ভয়ের কিছু নেই। নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা রোগী সুস্থ হয়।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন