রাজধানীর খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে গরিবের মোটা চালের দাম। এতে বাড়তি দরে চাল কিনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে ভোক্তা। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত বাজার তদারকির অভাবে অসাধু ব্যবসায়ীরা বারবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মহামারিকালেও অতি মুনাফা করতে ভোক্তার পকেট কাটছে।
ধানের বাম্পার ফলনেও চালের বাজারে স্বস্তি নেই। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিধি-নিষেধে সাধারণ মানুষের আয়ের পথ প্রায় বন্ধ। মঙ্গলবার ২৭ জুলাই সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক পণ্যমূল্য তালিকায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে- এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে সরু চালের দাম বেড়েছে এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। এছাড়া টিসিবি বলছে- গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রতিকেজি মোটা চাল রাজধানীর বাজারে ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মাঝারি আকারের চাল কেজিতে ৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া সরু চাল কেজিতে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি ক্যাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়- করোনাকালে আয় কমলেও রাজধানীতে ভোক্তার জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। এ সময়ে ভোক্তার নিত্যপণ্য থেকে শুরু করে একাধিক সেবা কিনতে বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত ভোক্তারা। জানতে চাইলে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, করোনাকালে পণ্যের দাম বাড়ানোর অর্থ ভোক্তার দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেওয়া। কারণ ভোক্তার আয় কমেছে।
এর মধ্যে ব্যয় বেড়ে গেলে তাদের হিমশিম খেতে হবে। তাই সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থার উচিত- বাজার তদারকি করে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা। এতে ভোক্তারা উপকৃত হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার ও নয়াবাজার ঘুরে খুচরা চাল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৬২-৬৫ টাকা, যা এক মাস আগে ৬০-৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৫৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫৬ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা। পাশাপাশি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৬-৪৭ টাকা। রাজধানীর মালিবাগ কাঁচাবাজারে চাল কিনতে আসা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী মো. সাহিন মিয়া বলেন, দেড় বছরে তার আয় কমেছে। অফিস না করলে বেতনও ঠিকমতো দেয় না।
এর মধ্যে আবারও লকডাউনে কাজ বন্ধ। এতে আয়ের পথ একেবারেই বন্ধ। যে টাকা আছে তা দিয়ে খুব কষ্টে চলতে হচ্ছে। আর বেঁচে থাকতে হলে খেতে হবে। এখন কী দিয়ে কী করব তা কিছুই বুঝতে পারছি না। এমন অবস্থায় চালের দাম বাড়তি। অন্যসব পণ্যও বেশি দরে কিনতে হচ্ছে। আমার বোবাকান্না কে দেখবে? কারও কাছে হাতও পাততে পারছি না। শুধু চাচ্ছি পণ্যের দাম যাতে কমে এবং সরকার এদিকে একটু নজর দেয়। মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রাইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা দীদার হোসেন বলেন, মিলাররা যে কোনো অজুহাতে চালের দাম বাড়ায়। তারা সিন্ডিকেট করে পুরো বাজার অস্থির করে রাখে। তাদের কাছে চাল আছে।
কিন্তু বিক্রি করছে বাড়তি দরে। এ কারণে পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে। কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক ও পাইকারি চাল বিক্রেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, মিলাররা ধানের দাম বাড়তি অজুহাতে মিল পর্যায় থেকে ৫০ কেজি চালের বস্তায় ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি করছে। ধানের দাম আসলেই বাড়তি কি না সরকারের পক্ষ থেকে তদারকি করা হলে আসল চিত্র বের হয়ে আসত। জানতে চাইলে নওগাঁ মিল মালিক মো. আসফাকুল্লাহ বলেন, বাজারে ধানের দাম বাড়তি। কারণ এবার তৃতীয় পক্ষ অধিক ধান কিনে রেখেছে। তারা করোনাকালে লাভের আসায় ধানের মৌসুমি ব্যবসায় নেমেছে।
দাম বাড়িয়ে বাজার কম ধান ছাড়ছে। এ কারণে চালের দাম বেড়েছে। বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। তবে জনবল সংকটে অনেক সময় আমাদেরও হিমশিম খেতে হয়। কেন দাম বেড়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। কোনো ধরনের অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন