সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় আজ মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর)। মামলার ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। দুদকের প্রত্যাশা আসামিরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবেন। তবে আসামিপক্ষ আশা করছে বেকসুর খালাস পাওয়ার।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়। ধারাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এ মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ করা হয়নি। অন্য সাত আসামি তাদের পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ করেন।
‘মানিলন্ডারিং আইনের ৪(৩) ধারায় বলা আছে, আদালত কোনো অর্থদণ্ড বা দণ্ডের অতিরিক্ত হিসেবে দণ্ডিত ব্যক্তির সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করিবার আদেশ প্রদান করিতে পারিবে যাহা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মানিলন্ডারিং বা কোনো সম্পৃক্ত অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বা সংশ্লিষ্ট।’
দুদক আইনের ৫(২) ধারায় বলা আছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারী অপরাধমূলক অসদাচরণ করিলে বা করার উদ্যোগ গ্রহণ করিলে তিনি সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের যোগ্য হইবেন।’
এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ফারমার্স ব্যাংক (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন প্রত্যাশা করছি। আশা করছি রায়ে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
তিনি আরও বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে তিন ধারায় অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি তিন ধারায়ই আসামিদের শাস্তি দেওয়া হবে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী শাহিনুর রহমান বলেন, আসামি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) ও ফারমার্স ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হকের বিরুদ্ধে দুদক অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি। আশা করছি আসামিরা খালাস পাবেন।
তিনি বলেন, অভিযোগে বলা হয়েছে বাবুল চিশতীর প্রভাবে ঋণ মঞ্জুর করা হয়েছে। কিন্তু কোনো কাগজে তিনি স্বাক্ষর করেননি। কোনো কাগজে তিনি সুপারিশও করেননি। এছাড়া লুৎফুল হক এত বড় ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে নেগেটিভ মার্ক করেছেন। তাই আশা করছি রায়ে আসামিরা খালাস পাবেন।
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক শেখ নাজমুল আলম রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দিন ধার্য করেন।
গত ২৯ আগস্ট একই আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে সাত আসামি নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। বর্তমানে তারা জামিনে আছেন। সাত আসামি হলেন- ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী), ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সফিউদ্দিন আসকারী আহমেদ, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায় পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাননি। এ মামলায় ২১ সাক্ষীর প্রত্যেকেই আদালতে সাক্ষ্য দেন।
দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১০ জুলাই ঋণ জালিয়াতি ও চার কোটি টাকা আত্মসাতে জড়িত থাকার অভিযোগে এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন