সৌদি প্রবাসী জয়নুদ্দিনের ঘরে শুক্রবার দিবাগত রাতে স্ত্রী মা ও পরকীয়া প্রেমিকসহ ৩ খুনের ঘটনাটি যে পরকীয়ার কারণেই ঘটেছে তা অনেকটাই নিশ্চিত পুলিশ। তবে ঘটনার পেছনে অন্য কেউ জড়িত ছিল কিনা বা কে ঘটিয়েছে, কখন ঘটিয়েছে, কিভাবে ঘটিয়েছে রুমের দেয়ালে তাজা রক্ত দিয়ে লেখাটি কে লিখেছে, কার রক্তে এ লেখা- অজানা এমন অনেক প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ঘাটাইলের কাশতলা দক্ষিণ-পাড়া গ্রামে। তাজা রক্তের লেখাটি শুকিয়ে এখন লাল রঙের রংতুলির এক ছন্দমালা হিসেবে শোভা পাচ্ছে দেয়ালে।
‘এমনটা হতো না যুদী আমার সুমী আমার কাছে থাকতো। পাশেই লেখা-এই সব কিছুর জন্য সুমীর বাবা দায়ী। প্রেমিক শাহজালাল ও সুমীর লাশের ঠিক উপরে লেখা-আমি সুমীকে অনেক ‘ আর একটি শব্দ অস্পষ্ট রয়েছে। ঘটনার দ্বিতীয় দিনেও রুমের মেঝে ও খাটের নিচে দেয়ালের সঙ্গে জমাট বাধা রক্তের ছাপ দেখা গেছে। ঘটনাটি যাই হোক এটা একটি বর্বরোচিত ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড। এ ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেলেও কিনারা করতে পারেনি পুলিশ ।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারনা করছেন পরকীয়া যুবকটি দুজনকে খুন করার পর নিজে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। তিন লাশ উদ্ধারের পর ওই রুম থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা ধারালো ছোড়া, রক্তাক্ত দুইটা রড, একটি হাতুড়ি ও মেশিনের একটি স্লাই উদ্ধার করা হয়। এ সময় প্রেমিক শাহজালালের পকেটে ওই ঘরের বারান্দায় ব্যবহৃত তালার একটি চাবিও পাওয়া যায়। ধারণা করা হয় চাবিটা তার কাছেই থাকতো। পরকীয়ার টানে নিয়মিত যাতায়াত করতো ওই ঘরে।
উল্লেখ, শুক্রবার দিবাগত রাতে সৌদি প্রবাসী জয়নুদ্দিনের ঘরে খুন হন তার স্ত্রী সুমি আক্তার (২৪), তার মা জমেলা বেওয়া ( ৬০) ও কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের সোহরাব আলীর পুত্র শাহজালাল (৩০)। একই সঙ্গে তার (প্রবাসীর) আড়াই বছরের শিশু সাফিকে মারাত্মক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনার দ্বিতীয় দিন রোববার ঘটনাস্থলে গিয়ে কথা হয় মামলার বাদী শাহনাজ বেগমের সঙ্গে। জানতে চাওয়া হলে তিনি সাংবাদিককে বলেন, আমার স্বামী জয়নালও কুয়েত প্রবাসী।
বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ থাকে না। ঘটনার রাতে আমি আমার শিশুসন্তান নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। ওই ঘরে এমন ঘটনার কোনো শব্দ পাইনি। নিহত জমেলা বেওয়ার মেয়ে জয়নব বিলাপ করে বলছিল, তাজা মানুষটা কিভাবে মারল। কী কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে তার কিছুই জানে না সে। স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, প্রবাসী জয়নুদ্দিনের স্ত্রী সুমি আক্তারের সঙ্গে নিহত কালিহাতী উপজেলার সাতুটিয়া গ্রামের শাহজালাল নামের এ যুবকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক দীর্ঘ দিনের। ৬ মাস আগেও সুমি আক্তার পরকীয়ার টানে ওই যুবকের হাত ধরে চলে গিয়েছিল।
৩ মাস ঘরসংসারও করে সে। পরে জয়নুদ্দিন প্রবাসে থাকায় তার পরিবারের সদস্যরা দেন দরবার করে তাকে আবার স্বামীর ঘরে নিয়ে আসেন। জানতে চাইলে ঘাটাইল থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিককে বলেন, ঘটনাটি একটি নিছক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। ঘটনাটি কিভাবে ঘটলো এ বিষয়ে সঠিক করে বলতে আর একটু সময় নিতে হবে। তদন্ত কাজ চলছে। রোববার বিকালে কাশতলা গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে বউ ও শাশুড়ির লাশ। কালিহাতীতে দাফন করা হয় নিহত যুবকের লাশটি।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন