লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ উদ্দিন টিপুর গাড়িচালক রাসেল শটগান নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেন। অস্ত্রটি উপজেলা চেয়ারম্যানের বলে জানিয়েছেন এক ব্যক্তি। লক্ষ্মীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে।
এসময় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম সালাহউদ্দিন টিপুর গাড়ি চালকের হাতে একটি আগ্নেয়াস্ত্র (শটগান) দেখা যায়। শুক্রবার (২ আগস্ট) দুপুরে জেলা শহরের তমিজ মার্কেট এলাকায় টিপুর বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ধাওয়া ও হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
জানা যায়, ঘটনার সময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে থাকা ওই যুবকের নাম রাসেল। তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান টিপুর ব্যবহৃত সরকারি গাড়ির চালক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অস্ত্রটি চেয়ারম্যান টিপুর নামে লাইসেন্সকৃত। কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে চলা সংঘর্ষের সময় আগ্নেয়াস্ত্রটি প্রদর্শন করা হয়। তবে অস্ত্রটি টিপুর হাতে ছিল না। সেটি গাড়িচালক ও যুবলীগ কর্মী রাসেলের হাতে ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজ শেষে শহরের চক মসজিদ এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মিছিল করার কথা ছিল। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যান।
মসজিদ থেকে বেরিয়ে তিনি মুসল্লিদের ওপর মারমুখী আচরণ করে লোকজনকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পরে টিপুর নেতৃত্বে যুবলীগ-ছাত্রলীগ মিছিল নিয়ে তমিজ মার্কেট এলাকায় টিপুর বাসার ভেতরে অবস্থান নেন।
লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) হাসান মোস্তফা স্বপনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সেখানে অবস্থান নেয়। এদিকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মিছিল শেষে হলে কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা বাজার ব্রিজ এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বের হয়। মিছিলটি চকবাজার মসজিদের সামনে গেলেই শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান শুরু করে। মিছিলটি উপজেলা চেয়ারম্যান টিপুর বাসার সামনে গেলে মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
এতে পুলিশের বাধা ভেঙে লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া ও হামলা করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তারাও শিক্ষার্থীদের ওপর ইট-পাটকেল ছোড়ে। এরমধ্যে ৭-৮ শিক্ষার্থীকে লাঠিসোটা দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয়। শিক্ষার্থীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে ছাত্রলীগের দুইজন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ধাওয়া ও হামলা চলাকালে টিপুর আগ্নেয়াস্ত্রটি তার গাড়ি চালক রাসেলের হাতে ছিল।
সেটি হাতে নিয়ে তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন। এদিকে ঘটনার পর চেয়ারম্যান টিপুর উসকানিতে সৃষ্ট ঘটনায় উপস্থিত পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টিপুর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। লক্ষ্মীপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্র হাতে থাকা ব্যক্তির নাম-পরিচয় পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন