চা কম-বেশি সব দেশেই জনপ্রিয়। পানীয় হিসেবেও মন্দ নয়। উপকারিতা-অপকারিতা মিলেই সারা বিশ্বে চায়ের রাজত্ব। বিশ্বের অনেক দেশ চা উৎপাদনে বিখ্যাত। চায়ে রয়েছে অনেক বেশি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। শুধু তা-ই নয়, চা রক্ত জমাট বাঁধাও দূর করে। আর লৌহ শোষণের মাত্রা কমায় এই চা। এতে পটাশিয়াম, জিংক তো আছেই।
তবে সাধারণ চায়ে ক্যাফেইন, ট্যানিন ইত্যাদি থাকে বলে অনেক সময় সমস্যা হয়। পাশাপাশি সাধারণ চা খালি পেটে খেলে কারও কারও গ্যাসের সমস্যা বাড়ে। ভেষজ চায়ে সে ভয় নেই। নানা রকম ভেষজ চা বাজারে পাওয়া যায়।
কোন চায়ে কী গুণ, তা কখন খাবেন কীভাবে পান করা উচিত তার কয়েকটা উদাহরণ-
তুলসি চা : এক বাটি পানিতে একমুঠো তুলসি পাতা ফুটতে দিন। টগবগ করে ফুটলে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট ফোটান। এরপর এতে মেশান এক চামচ মধু আর দু-চামচ লেবুর রস। মধু দেবে এনার্জি, লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগবে। আর তুলসির প্রভাবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কম থাকবে। নিয়মিত খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
শুকনো কাশির প্রকোপ কমাতে চাইলে এতে ধনে ও আদা মিশিয়ে নিন। এক লিটার পানিতে দু-চামচ আদা কুচি, চার চামচ ধনে ও একমুঠো তুলসি পাতা দিয়ে কম আঁচে ভাল করে ফোটান, যতক্ষণ না জল অর্ধেক হয়ে যায়। এবার ছেঁকে নিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে খান।
কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে এই চা না খাওয়াই ভাল। যেমন-
*গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খাবেন না। কারণ তুলসিতে আছে এস্ট্রাজল যা জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে।
*ডায়াবিটিসের ওষুধ খেলে বা ইনসুলিন নিলে নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। কারণ তুলসি রক্তে সুগারের মাত্রা কমায় বলে জানা গেছে।
*রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেলেও সাবধান। কারণ তুলসিও রক্ত পাতলা রাখে।
*বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, যাদের নিয়মিত অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেতে হয়, তারা তুলসি খাওয়ার আগে দু-বার ভাববেন। কারণ দুইয়ের মিলিত প্রভাবে লিভারের কিছু ক্ষতি হতে পারে।
দারুচিনি চা : দারুচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়ে বানাতে পারেন ভেষজ চা। এক চামচ দারুচিনির গুড়ো, সিকি চামচ গোলমরিচ গুড়ো, এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধু-র মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত পানি দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন।
দারুচিনির কুমারিন, গোলমরিচের পিপারিন প্রদাহের প্রবণতা কমাবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। লেবুর ভিটামিন সি-এর কাজও তাই। সঙ্গে যুক্ত হবে মধুর এনার্জি। বেশ খানিকক্ষণ চাঙ্গা থাকার অব্যর্থ পানীয়। তবে কুমারিন বেশি খাওয়া ঠিক না। লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আবার সুগার কমাতে পারে বলে যার ডায়বেটিসের ওষুধ চলছে, তিনি বুঝেশুনে খাবেন।
অশ্বগন্ধা চা : রোজ সকালে বা বিকেলে এক কাপ অশ্বগন্ধার চা খেতে পারেন। এক কাপ ফুটন্ত পানিতে এক চা-চামচ অশ্বগন্ধা মূলের গুড়ো দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন মিনিট ১০-১৫। ছেঁকে লেবুর রস ও মধু দিয়ে খান। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি প্রদাহের প্রবণতা কমবে। অশ্বগন্ধার জীবাণুনাশক গুণও আছে। কমবে মানসিক চাপ-অবসাদ ও বয়সজনিত ক্ষয়-ক্ষতির হার। এই চা খেলে খুব সহজে সতেজ ও ফুরফুরে হওয়া যায়।
আদা চা : এক চা-চামচ আদা কুচি, দুটো লবঙ্গ, এক ইঞ্চি দারুচিনি থেঁতো করে দু-কাপ পানি দিয়ে ফোটান। তাতে দিন ৩ ইঞ্চি কমলালেবুর খোসা। কম আঁচে ফোটান ১৫ মিনিট। দেড় চামচ মধু মিশিয়ে খান। জ্বর-সর্দি-গলা ব্যথা, সবের আরাম হবে।
হলুদ চা : আধ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ও সিকি চামচ গোলমরিচের গুঁড়োতে ফুটন্ত পানি মেশান। এতে মেশান একটা গোটা লেবুর রস আর দেড় চামচ মধু। সকাল-বিকেল খেলে ইমিউনিটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
পুদিনা চা : ফুটন্ত পানিতে মেশান রোজমেরি। তাতে দিন ১০-১২টা পুদিনা পাতা। দেওয়ার আগে একটু কুচি কুচি নেবেন যাতে গন্ধটা পুরোপুরি বেরোয়। ১৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। তৈরি পুদিনা চা।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন