ফুটফুটে শিশুটির বয়স সবেমাত্র তিন ছুঁয়েছে। মায়ের কোল থেকে নেমে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে বেড়ানোর বয়স। আধো আধো বোলে বাবার কাছে আবদার করার বয়স। তার হইচইয়ে বাড়ি মুখর হয়ে থাকবে। চারদিকের সবকিছু সে আবিস্কার করবে অপরা বিস্ময়ে। পৃথিবীর কোনো মন্দ বিষয়, কোনো একাকীত্ব তাকে স্পর্শ করবে না। কোনো বিপদ দেখলেই ছুটে যাবে মায়ের আঁচলতলে।
কিন্তু কোথায় মা? এই বয়সেই ভয়ানক ঘটনা ঘটে গেল তার জীবনে। মাকে হত্যার দায়ে বাবা গ্রেপ্তার হয়ে জেলে!কী হবে তার?
শিশুটির নাম সপ্তক চক্রবর্তী। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ফুলপুর সদরের সাহাপাড়া
এলাকা থেকে তার মা মানসী চক্রবর্তী টুম্পার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে! পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের প্রাথমিক তদন্ত থেকে ধারণা করা হচ্ছে, মানসীকে হত্যা করে গলায় দড়ি বেঁধে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে তার স্বামী-শাশুড়ি-ননদরা।
বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে মানসীর ওপর ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন করছিল তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। প্রতিদিন বাড়িতে সপ্তকের মাকে তারননদী টুম্পা, শ্বশুর, শাশুড়িশারীরিক নির্যাতন করত বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এই ঘটনায় স্বামী অণুক চক্রবর্তী ওরফে ফুলকে গ্রেপ্তার করে ৭ দিনের রিমাণ্ডের আবেদন জানিয়েছে ডিবি পুলিশ।
জন্মের পর থেকেই মায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা দেখে এসেছে সপ্তক। তার বাবা অণুক চক্রবর্তী নেশাখোর। নেশার টাকার জন্য স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করতেন। ছেলেকে না সামলে সমর্থন দিয়ে যেতেন তার মা-বোনেরা।
মেয়েকে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচাতে দরিদ্র বাবা বাবুল কাঞ্জিলাল বেশ কয়েকবার সহায়-সম্বল বিক্রি করে টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু অণুকের নেশার টাকা দ্রুত ফুরিয়ে যায়। আবারও নেমে আসে নির্যাতন। নেশাখোর ছেলেকে বাঁধা দেন না মা, উল্টো ঝাঁপিয়ে পড়েন পুত্রবধূর ওপর নির্যাতনে।
হত্যার পর বলা হয় আত্মহত্যা করেছে মানসী। বলা হয়, সে মানসিক রোগী ছিল। আসলে সবই সত্য চাপা দেওয়ার চেষ্টা।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে সপ্তককে নিয়ে পালিয়েছেন শাশুড়ি। মাকে শেষবারের মতো দেখাও হয়নি তার।
সপ্তক বুঝতেও পারছে না, মাকে আর কোনোদিন সে পাবে না। তার কাস্টডি কে নেবে, তা এখনও ঠিক হয়নি। অণুক চক্রবর্তী আর তার মা-বোনদের শাস্তি ঠিক হবে আদালতে। কিন্তু, সবকিছুর পর অবুঝ সপ্তকের দিকে তাকিয়ে বুক ফেটে যায়।
সপ্তকের ঘটনা যেন সবাইকে আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে, শুধু জন্ম দিলেই বাবা হওয়া যায় না। সন্তানের বেড়ে ওঠার জন্য সুন্দর পরিবেশ দিতে হয়। একজন নেশাখোর, যৌতুকলোভী, হত্যাকারী বাবা সেই পরিবেশ কখনও দিতে পারে না।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন