১৯৭০–এর দশকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ রিচার্ড পেটো এ প্রশ্ন জোরালোভাবে তুলেছিলেন। তিনি যে যুক্তি দেখিয়েছিলেন তা হলো প্রাণীর শরীরের আকার এবং বয়সের সঙ্গে ক্যান্সার হারের (রেট) শঙ্কা বেশ ক্ষীণ। এটা আশ্চর্যের যে দীর্ঘজীবী ও বড় শরীরের প্রাণীদের কোষ ছোট এবং ক্ষণজীবী প্রাণীদের কোষের তুলনায় বহুগুণ বেশি বিভাজিত হয়। তাই বড় প্রাণীদের কোষের মিউটেশন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি এবং এই মিউটেশন থেকে তাদের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও বেশি হওয়ার কথা। তিনি ধারনা করেছিলেন যে হাতির শরীরে নিশ্চয়ই বিশেষ কিছু আছে, যা ক্যান্সার কোষ উৎপাদন ও বিভাজনের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সক্ষম।
রিচার্ড পেটোর সে ধারণার বাস্তব রূপ পাওয়া গেছে ২০১৫ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায়। সে বছর প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে গবেষকেরা বলেছেন, হাতির জিনোমে পি৫৩ নামের একটি জিনের ২০টি কপি থাকে, যেখানে মানুষ বা অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে এই জিনের কপি থাকে মাত্র ১টি। এই জিনটি ‘টিউমার সাপ্রেসর’ বা টিউমারপ্রতিরোধী হিসেবেও পরিচিত। কোনো কোষের ডিএনএ যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এই পি৫৩ জিনের প্রোটিন হয় কোষের সেই ক্ষতি সারিয়ে তোলে অথবা কোষটিকে মেরে ফেলে। অনেক বিজ্ঞানী এই জিনটিকেই হাতির দীর্ঘজীবিতার একটি কারণ বলে মনে করেন।
অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী কার্লো ম্যালে তখন আফ্রিকান হাতির শরীরে পি৫৩ জিনেরই একাধিক কপির উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। কয়েক বছর ধরে পি৫৩ জিনের কাজ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে এবং এ–সম্পর্কিত নতুন নতুন তথ্য উন্মোচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ইউটাহ-এর পেডিয়াট্রিক অনকোলজিস্ট জশুয়া স্কিফম্যান ২০১২ সালে প্রথম রিচার্ড পেটোর ধারণা সম্পর্কে জানতে পারেন।
শরীরের পি৫৩ জিনের যে সমস্যার কারণে শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, সে সমস্যার একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন স্কিফম্যান। কার্লো ম্যালের আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি হাতির শরীরের পি৫৩ দিয়ে তাঁর রোগীদের চিকিৎসা সম্ভব কি না, সেটি নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। তাঁর কাজের ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি। এ গবেষণা থেকে মানুষের ক্যান্সার চিকিৎসায় যুগান্তকারী কোনো অগ্রগতি হবে? সময়ই তা বলে দেবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন