বোদায় চুরির অপবাদ দিয়ে নারীকে বেঁধে নির্যাতন

বোদায় চুরির অপবাদ দিয়ে নারীকে বেঁধে নির্যাতন

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মোবাইল চুরির অভিযোগে এক নারীকে (২৬) কোমরে রশি বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১০ মে) ওই নারীকে হেনস্থা ও কোমরে রশি বেঁধে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভ্যানে জোর করে এক নারীকে তুলে রশি দিয়ে বাঁধছেন এক ব্যক্তি। তাকে সহযোগিতা করছেন আরেকজন। একদল নারী তার সঙ্গে তর্ক করছেন। উৎসুক জনতা এই দৃশ্য দেখতে ভিড় করছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে ওই নারী জেমজুট মিল বাজারে আসলে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ঝলঝলি এলাকার আব্দুল জব্বার একদল নারীসহ এসে তাকে মারধর করে ভ্যানে তুলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায়। তারা তাকে ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে নেয়।

সেখানে জব্বারসহ গ্রামের কিছু লোক তাকে গাছের সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় মারধর করে। এ সময় যেই তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যায় তাকেই মারধর করে তারা। ওই নারীর পরিবারের সব সদস্যকেই মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারটির। একপর্যায়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুর নির্দেশে ওই নারীকে কান ধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। মারধরের শিকার ওই নারী বর্তমানে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

তিনি বলেন, আমি জব্বারদের বাড়িতে তার মায়ের সাথে কয়েকদিন ধরে আছি। কথা বলার জন্য ওর মা আমাকে মোবাইলটি দেয়। আমি সেটি নিয়ে কথা বলতে বলতে জেমজুট বাজারে আসি। ওরা কাছের মানুষ। ফোন করলে আমি বলি ফোনটি একটু পর দিয়ে আসছি। এর মধ্যেই মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর জেমজুটে এসে মোবাইল চুরির অপবাধ দিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে জব্বার। পরে আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বাড়ি। সেখানেও আমাকে মারধর করে।

ভুক্তভোগী নারীর বোন বলেন, আমার বোনটি মানসিকভাবে একটু অসুস্থ। সে হুটহাট করে বাড়ি থেকে চলে যায়। তার দুই সন্তান রয়েছে। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে যারা তাকে আশ্রয় দেয় তারাই আবার তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলছে। মোবাইল চুরির অপবাধ দিয়ে আমার বোনকে জব্বার ও তার সহযোগি নারী পুরুষরা জেমজুট এলাকায় মারধর করে। পরে আবুল কালাম আজাদ চেয়ারম্যানের বাড়িতেও গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে। আমরা যেই তাকে বাঁচাতে গেছি তাকেই মারধর করেছে তারা।

জেমজুট মিল এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ বলেন, হঠাৎ দেখি এক নারীকে ৮-১০ জন নারী ও কয়েকজন পুরুষ হঠাৎ মারধর শুরু করে। তারা জানায়, মোবাইল চুরি করায় তারা তাকে ধরতে এসেছে। পরে তারা রশি দিয়ে বেঁধে তাকে ভ্যানে করে নিয়ে যায়। বিষয়টি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। তাই মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করি। এ বিষয়ে আব্দুল জব্বারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই মেয়ে অসামাজিক কাজের সঙ্গে জড়িত। সে মোবাইল চুরি ও টাকা চুরি করেছে। স্থানীয়রা তাকে ধরে এনেছিল। পরে সে ভালো হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলে এবং মাফ চাইলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

বোদা থানার ওসি মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তার (নির্যাতনের শিকার নারীর) খোঁজ খবর নিচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবার আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমরা সর্বত্মক সহযোগিতা করব।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password