টমাস আর টোনিয়ার পরিচয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। পরিচয়ের পর থেকেই তাদের মধ্যে নিয়মিত মেসেজ আদান-প্রদান হতে থাকে। দু'জনেরই ভ্রমণে ভীষণ আগ্রহ, আর নিজেদের পোষা কুকুরের ব্যাপারেও নিয়মিত আলোচনা করতেন তারা।
৩৪ বছর বয়সী টমাস ওয়েস্ট মিডল্যান্ডের বাসিন্দা টোনিয়াকে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনাও করা শুরু করে দেন।
টোনিয়া ছিলেন সুন্দরী ও রসিক, কিন্তু আসলে একজন প্রতারক।
টমাস বলেন, "টোনিয়ার সাথে আমার অনেক বিষয়ে মিল ছিল আমরা টানা সাত মাস একে অপরের সাথে কথা বলি। সে দেখতে সুন্দর ছিল, পাশাপাশি ছিল খুবই রসিক এবং দয়ালুও।"
"কিন্তু এখন যখন চিন্তা করি, আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আমার দুর্বলতার সুযোগ নেয়া তার জন্য কতটা সহজ ছিল। আমার কোনো ধারণাই ছিল না যে সে আমার ব্যক্তিগত তথ্য চাচ্ছিল যেন সেগুলো ব্যবহার করে সে টাকা পেতে পারে।"
ঋণ পাবার উদ্দেশ্যে ছলনা
টমাস আসলে বড় ধরণের একটি ফাঁদে পড়েছিলেন। টোনিয়া দাবি করে যে তার বাবা-মা মারা গেছে এবং সে যুক্তরাষ্ট্রে তার দাদির সাথে থাকে। টোনিয়া বলে তার দাদি ক্যান্সারে আক্রান্ত।
টোনিয়া বলে যে সে তার দাদির খাবার এবং চিকিৎসার খরচ হিসেবে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে। আর তাই টমাসের কাছে টাকা চায় সে।
টমাসকে সে কিছু কাগজপত্র দেখায়, যেখানে দেখা যায় যে উত্তরাধিকারসূত্রে বিশাল অঙ্কের সম্পদ লাভ করতে যাচ্ছে সে। সেসব কাগজপত্র সম্পূর্ণ ভুয়া ছিল।
পুরো ফাঁদটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করতে টমাসের অ্যাকাইন্টে টাকা পাঠানো হয়। নিজের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট না থাকায় কয়েকটি অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে টমাসকে অনুরোধ করে টোনিয়া।
আসলে টমাসকে পাঠানো টাকা তারই নাম ভাঙিয়ে ঋণ হিসেবে নেয়া হয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে।
টমাস যখন সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে চিঠি পেতে শুরু করেন, তখন প্রথমবার তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি জালিয়াতির শিকার হয়েছেন।
স্থানীয় এইচএসবিসি ব্যাংকে গিয়ে নিজের পরিস্থিতি বর্ণনা করার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার টাকা ফেরত দেয়। বর্তমানে তারা তার ক্রেডিট রেটিং সংষ্কারের চেষ্টা করছেন।
টমাস বলেন, "আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি যেন এর মাধ্যমে আর কারো সাথে সম্পর্কে না জড়াই। আবার কাউকে বিশ্বাস করতে আমার অনেকদিন সময় লাগবে।"
প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণার স্বাভাবিক ঘটনার তুলনায় এই ঘটনা কিছুটা ভিন্নধর্মী হলেও চিরাচরিত প্রতারণার গল্পের সব উপাদানই এর মধ্যে রয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়া বা ডেটিং সার্ভিসের মাধ্যমে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারক তার নিজের মনগড়া ভাবমূর্তি গড়ে তোলেন, এটিকে ক্যাটফিশিং বলা হয়।
ইউকে ফাইনান্সের এক জরিপে উঠে আসে যে ডেটিং ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের শতকরা ২৭ ভাগই ক্যাটফিশিংয়ের ফাঁদে পড়েছেন।
সম্ভাব্য ভুক্তভোগী বা ভুক্তভোগীর কাছে গড়ে অন্তত ৩২১ পাইন্ড চাওয়া হয়, তবে অনেকেই এর চেয়ে অনেক বড় অংকের ক্ষতির সম্মুখীনও হয়েছেন।
ইউকে ফাইনান্সের সাম্প্রতিক তথ্য থেকে জানা যায় ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে প্রেমের ফাঁদে পড়ে ৭৯ লাখ পাউন্ড হারিয়েছে মানুষ, যা তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫০ ভাগ বেশি।
ইউকে ফাইনান্সের অর্থনৈতিক অপরাধ বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেট ওরোবেক বলেন, "প্রেমের ফাঁদ মানুষের জন্য অর্থনৈতিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে। অনলাইন ডেটিং সার্ভিসের জনপ্রিয়তা বাড়ায় মানুষের এই ধরণের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা বেড়েছে।"
"এই ভ্যালেন্টাইন্স ডে'তে আমরা সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি।"
তবে এই ধরণের প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের টাকা ফেরত দেয়ার ক্ষেত্রে কী নীতি অনুসরণ করা হবে সেবিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ব্যাংকগুলো। কারণ এরকম ঘটনার ক্ষেত্রে ব্যাংক ও ব্যক্তি, উভয়েই ক্ষতিগ্রস্থ হন।
অনলাইনে নিরাপদ থাকার উপদেশ
- প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করা ব্যক্তিরা প্রোফাইল ঘেঁটে একজনের সম্পদ ও জীবনধারা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করে ভুক্তভোগীর জীবনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে।
- পুলিশ তদন্ত করে ভুক্তভোগীকে সাহায্য করতে পারলেও অনেক সময় হারানো টাকা ফেরত আনতে সক্ষম হয় না।
- আইপি অ্যাড্রেস মাস্কিং করে বা অনিবন্ধিত ফোন নম্বর ব্যবহার করে সহজেই নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারে প্রতারকরা।
- যার সাথে কখনো দেখা হয়নি, এমন মানুষকে কখনো অনলাইনে টাকা পাঠাবেন না।
- যেসব ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ব্যবহার করে আপনাকে প্রভাবিত করা যেতে পারে, সেধরণের কিছু অনলাইনে পোস্ট করার আগে দু'বার ভাবুন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন