নেদারল্যান্ডসের দ্য মিয়েন্ডার মেডিক্যাল সেন্টারে অনেক বয়স্ক রোগীর চিকিৎসা হয়। কিন্তু তা বলে এক হাজার বছর বয়সের ‘রোগী’! কয়েক বছর আগে হাসপাতালে শারীরিক পরীার জন্য নিয়ে আসা হয় ওই প্রবীণ ‘রোগী’কে। রোগী অবশ্য কোনও সাড়া দেন না, হাঁটাচলা করতে পারেন না এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসও নেন না। ‘রোগী’ এক হাজার বছর বয়সি এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মূর্তি। এতদিন তাঁর ঠিকানা ছিল নেদারল্যান্ডসেরই একটি মিউজিয়াম।
ওই বৌদ্ধ মূর্তির মধ্যে যে এক মানবদেহ আছে, তা মুখেমুখে প্রচলিত থাকলেও, বিজ্ঞানীরা এতদিন তার সত্যাসত্য জানতেন না। প্রাচীন এই রহস্যের উপর আলোকপাত করার জন্যই মিউজিয়াম থেকে ওই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর মূর্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
সোনালি রঙের ওই ধাতব বৌদ্ধ মূর্তির সিটি স্ক্যান করার পরই তাজ্জব হয়ে যান উপস্থিত চিকিৎসক এবং গবেষকরা। দেখা যায়, বাইরে দেখে যা নেহাতই মূর্তি, তার ভিতরে পদ্মাসনে ধ্যানে মগ্ন এক সন্ন্যাসী! যাঁর নাম লিউকুয়ান।
ওই সন্ন্যাসীর দেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অবশ্য কিছুই ছিল না। পরিবর্তে তাঁর দেহের ভিতরে বৌদ্ধ ভাষায় লেখা কাপড় ভরা ছিল। কী ভাবে তাঁর দেহ থেকে সমস্ত অঙ্গ বার করে নেওয়া হল, কী ভাবে তাঁর মমি তৈরি হল তা এখনও রহস্যই রয়েছে।
বিস্তর গবেষণাও চলছে এ নিয়ে। নিজেই নিজের দেহের মমিফিকেশন জাপানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে খুবই প্রচলিত প্রথা। এশিয়া জুড়েই এমন রীতির চল ছিল বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের মধ্যে। চিনেও এ রকম দেখা গিয়েছে।
কী ভাবে ধীরে ধীরে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা নিজেদের দেহ মমি বানাতেন? জেরেমিয়া কেন নামে এক লেখকের ‘লিভিং বুদ্ধা’ নামে বইয়ে এর উলেখ রয়েছে। ওই বইয়ে উলেখ করা হয়েছে এর পদ্ধতি।
ইচ্ছুক সন্ন্যাসীরা খুব কঠিন ডায়েট চার্ট অনুসরণ করেই নাকি এমন করতেন। বইতে দাবি করা হয়েছে, এটা খুব ধীর গতির প্রক্রিয়া। তাঁরা খাদ্যতালিকায় চাল, গম, সোয়াবিন জাতীয় কোনও বস্তু রাখতেন না।
পরিবর্তে বাদাম, বেরি, গাছের ছাল খেতেন। এতে নাকি ক্রমে তাঁদের শরীরের চর্বি গলে যেত এবং শরীর আদ্রতা হারিয়ে ক্রমশ শুষ্ক হয়ে উঠত। মৃত্যুর পর শরীরে ব্যাকটিরিয়ার বৃদ্ধি আটকাতে জীবিতাবস্থায় বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদ খেতেন তাঁরা।
আর খেতেন বিশেষ এক ধরনের চা। যা বিষাক্ত হার্ব দিয়ে বানানো হত। এই চা পান করার ফলে তাঁদের শরীরও বিষাক্ত হয়ে উঠত এবং মৃত শরীরে ম্যাগট তৈরি হতে পারত না। এইভাবে দীর্ঘদিন ধরে কড়া ডায়েটের ফলে ওই সন্ন্যাসী যখন একেবারেই মৃতপ্রায়, তখন তাঁকে মাটির নীচে একটি কে স্থানান্তর করা হত। তিনি সেই করে ভিতরেই ধ্যানে বসতেন।
আর বাঁশের তৈরি একটি ফানেলের মধ্যে দিয়ে শ্বাস নিতেন। ওই কে সন্ন্যাসীর সঙ্গে শুধু একটা ঘণ্টা থাকত। প্রতিদিন তিনি ঘণ্টা বাজিয়ে বোঝাতেন যে, তিনি বেঁচে আছেন। যে দিন তিনি ঘণ্টা আর বাজাবেন না, সে দিনই ধরে নেওয়া হত তিনি মারা গিয়েছেন। তার পর বাঁশের ফানেলটা খুলে নেওয়া হত।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন