মাদক সাম্রাজ্যে চলছে নারীদের রাজত্ব। ড্রাগ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পাইকার কিংবা খুচরা মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ সবই করছে নারী। এমনকি মাদক পরিবহনেও নারীর সংশ্লিষ্টতা বেড়েছে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
সবচেয়ে ভয়ংকর সংকেত হচ্ছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নারী বন্দীদের শতকরা ৮০ শতাংশই হচ্ছে মাদক মামলার আসামি। একে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সাড়ে সাত হাজার বন্দীর মধ্যে ৪৫ শতাংশই হচ্ছে মাদক মামলার আসামি। যার মধ্যে কারাগারে নারী বন্দীর হচ্ছে হচ্ছে প্রায় ৩৫০। যাদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ হচ্ছে মাদক মামলার আসামি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার কামাল হোসেন বলেন, কারাগারে প্রতিদিনই অনেক নারী মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে আসেন। অনেকে আবার প্রতিদিনই জামিনে মুক্ত হয়ে কারাগার থেকে বের হন। গ্রেফতার হয়ে যত নারী কারাগারে আসে তাদের মধ্যে ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই হচ্ছে মাদক মামলার আসামি।
চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে ইদানীং মাদক পরিবহনে নারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসার সঙ্গে নারীর সম্পৃক্ততা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে।
অধিদফতরের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম নগরীর ১৬ থানায় অধিদফতরের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে ১৫৯ জন। যার মধ্যে কোতোয়ালি সার্কেলে ২৮ জন, ডবলমুরিং সার্কেলে ১৩ জন, পাঁচলাইশ সার্কেলে ২৮ জন, বন্দর সার্কেলে ৩৮ জন, চান্দগাঁও সার্কেলে ৩৭ জন এবং পাহাড়তলী সার্কেলে ১৫ জন। যাদের মধ্যে নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৪০ জন। যাদের সিংহভাগই পাইকারি মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে অধিদফতরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তাদের একেক জনের সঙ্গে পাঁচ থেকে ১০ জন খুচরা মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। নারী মাদক ব্যবসায়ীদের প্রায় সবাই ইয়াবা বিক্রির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় ৬০০ স্পটে মাদক বিকিকিনি হয়। যার মধ্যে রয়েছে স্টেশন রোড, পাহাড়তলী, টাইগারপাস, কদমতলী মতিঝরনা, অলংকার মোড়, এনায়েত বাজার, ফিরোজ শাহ কলোনি, বায়েজিদ শের শাহ কলোনি, অক্সিজেন মোড়, গোয়ালপাড়া, বাটালীহিল অন্যতম। এসব স্পটের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে নারীরা। এ ছাড়া আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে যত মাদকের চালান আটক করা হয় সেসবের উল্লেখযোগ্য অংশে থাকে নারী মাদক ব্যবসায়ীদের সংশ্লিষ্টতা।
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যে সব নারীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে শুধু তাদের মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে এখনো মামলা হয়নি, তাদের এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। তালিকার বাইরে কী পরিমাণ মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন