কুমিল্লার লাকসামে সোলেমান হোসেন চুমকি (৩০) নামক এক হিজড়া বিষপানে আত্মহত্যা চেষ্টার পরপরই তাকে নিয়ে আসা হয় হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত সহকারী নার্স আবুল খায়ের (৪৯) তাকে দেখেই মৃত ঘোষণা করেন।
ওই হিজড়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসা অন্যান্যরা তা মানতে নারাজ। শেষ পর্যন্ত তাকে ওয়াশ করতে গেলেই হঠাৎ জেগে উঠে নার্স কর্তৃক মৃত ঘোষণা করা হিজড়া চুমকি! এ সময় ক্ষুব্ধ চুমকি ও অন্যানরা ওই সহকারী নার্সকে মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি, হামলা চালিয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগেও।
গতকাল সোমবার বিকেলে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার এই ঘটনায় লাকসাম থানায় মামলা হয়েছে।
চুমকি ও সঙ্গীয়রা জানান, চুমকিকে না জানিয়ে তার ছোট ভাইকে বিয়ে এবং টুনি নামক এক হিজড়া হঠাৎ তাকে ছেড়ে লাকসাম থেকে ঢাকা চলে যাওয়ার অভিমানে সোমবার বিকেলে তিনি লাকসামের ভোজপাড়ার বাসায় বিষপান করেন। এ সময় অন্যান্য হিজড়ারা বাসায় ছিল না।
খবর পেয়ে দ্রুত ২/৩ জন ছুটে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। এ সময় জরুরি বিভাগে থাকা সহকারী নার্স আবুল খায়ের তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে চুমকি ও তার সাথে হাসপাতালে আসা সঙ্গীদের অভিযোগ।
তারা চুমকির মৃত্যুর বিষয়টি বিশ্বাস না করায় একপর্যায়ে আবুল খায়েরকে ওয়াশ করতে বাধ্য করেন। ওই নার্স পাইপ দিয়ে তাকে ওয়াশ শুরু করেন। এ সময় নলের আঘাতে হঠাৎ রোগী চুমকি জেগে উঠে নার্স আবুল খায়েরের ওপর হামলা চালায়। তার সাথে অন্য হিজড়ারাও হামলায় অংশ নেয়। এ সময় তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী নার্স আবুল খায়ের তার ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুরের বিষয়ে লাকসাম থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, বিষ সেবনকারী চুমকিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার পরই তাকে কুমিল্লা কুচাইতলী হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়ায় তারা তাকে চিকিৎসা করানোর জন্য বাধ্য করেন। এ সময় তিনি জরুরি বিভাগের বিছানায় চুমকিকে শুইয়ে নাকে ও মুখে পাইপ দিয়ে ওয়াশের চেষ্টা করলে সে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে অন্যান্যদের সহযোগিতায় তার ওপর হামলা চালায় এবং জামা কাপড় খুলে ফেলে।
হিজড়ারা জরুরি বিভাগের টেবিলের, প্লাস্টিকের চেয়ার ও অন্যান্য জিনিষপত্র ভাঙচুর করে ৩/৪ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। তিনি হিজড়াদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি তাকে মৃত ঘোষণা করিনি।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আবদুল আলী বলেন, হিজড়ারা সহকারী নার্স আবুল খায়েরকে মারধর ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
লাকসাম থানার ওসি নিজাম উদ্দিন বলেন, হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে সহকারী নার্স আবুল খায়ের থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন