১ টি বাসর রাতের গল্প

১ টি বাসর রাতের গল্প

বাসরঘরে বসে বসে হাই তুলছে অরণী।আর নাফিস সেই তখন থেকে মোবাইল ফোনে কথা বলেই যাচ্ছে জেনি নামের কারো সাথে।অরণী ভেবে পাচ্ছে না এখন সে কি করবে?ভীষণ ঘুম পাচ্ছে কিন্তু এভাবে অচেনা এক পুরুষকে সামনে বসিয়ে রেখে ঘুমিয়ে পরাটাও অনিরাপদ মনে হচ্ছে তার কাছে।

অরণী উঠে গিয়ে বারান্দায় কয়েকবার পায়চারি করল।বারান্দার পাশেই বিশাল এক তেঁতুল গাছ।তেঁতুলগাছে ভূত থাকে;এটা ভেবে তার গা ছম ছম করে উঠল।সে বেশিক্ষণ বারান্দায় বসে থাকতে পারলো না।আবার রুমের ভেতর এসে বসলো।

মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সে মাঝারি আকারের রুমটা লক্ষ্য করলো। অদ্ভুত একটা রুম।এখানে ঐশ্বর্যের কোন চিহ্ন নেই।ফ্লোরে একটা বিছানা পাতা দক্ষিণের জানালা ঘেঁষে।তার পাশে ছোট একটা চেয়ার-টেবিল,একটা কাবার্ড।আর বাকি জায়গা জুড়ে বইয়ের তিনটা সেল্ফ।সেল্ফগুলোতে রাজ্যের বই আর ম্যাগাজিন। বেশিরভাগ বই-ই ইংরেজিতে লেখা।

অরণী ভেবে পাচ্ছে না,এই ছেলের ভেতর এত ইংরেজি প্রেম কেন?পরক্ষনেই তার মনে পরে গেল,সে শুনেছে নাফিস ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করেছে।তার মানে “হেই ড্যুড,হোয়াটস আপ বাডি” কালচারের ছেলে সে!

অরণীর ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলো।

শেল্ফ থেকে দু’একটা বই নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে সে রেখে দিল।ছোটবেলা থেকেই ইংরেজিতে তার ভয়াবহ দূর্বলতা।

এই মুহূর্তে বসে বসে নাফিসের প্যান প্যানে প্রেমালাপ শোনা ছাড়া অরণীর আর কিছুই করার নেই।

নাফিস এখনো ফোনটা কানে ধরে আছে।আলাপ শুনে বোঝা যাচ্ছে, নাফিসের প্রেমিকা জেনি হঠাৎ নাফিসের এই বিয়েটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

তাই বাসররাতটা এভাবেই সে ফোনে কথা বলে

কাটিয়ে দিতে চাচ্ছে।অরণী বুঝতে পারছে না,এভাবে কয়টা রাত জেনি তার প্রেমিককে নববিবাহিতা স্ত্রীর সান্নিধ্য থেকে দূরে রাখতে পারবে?

বেচারা জেনি!!বেচারা প্রেম!!জেনি নামের অচেনা মেয়েটার জন্য অরণীর মায়া হচ্ছে।

অরণী ইশারায় কয়েকবার নাফিসকে ফোন রেখে দিতে বলেছিল।কিন্তু নাফিস আগুনচোখে তার দিকে তাকিয়েছে। তখন অরণীর আর কিছু বলার সাহস হয়নি। তবে নাফিসের এভাবে সারারাত প্রেমিকার সাথে ফোনে কথা বলে কাটিয়ে দেবার প্ল্যানটাতে অরণী ভীষণ খুশি।এভাবে মেঘ না

চাইতেই যে বৃষ্টির দেখা মিলবে– তা সে স্বপ্নেও ভাবেনি।অরণী হাসছে মিটি মিটি।ওর চোখে-মুখে এক ধরনের প্রশান্তি।

এদিকে নাফিস ফোনে কথা বলছে আর কৌতুহলী চোখে অরণীকে দেখছে।প্রথম থেকেই ওর কাছে সবকিছু কেমন যেন খটকা লাগছে। গ্রামের একটা মেয়ে বউ সেজে তার রুমে বসে আছে।কতই আর বয়স হবে!দেখে তো মনে হচ্ছে সুইট সিক্সটিন।

কিন্তু সুইট সিক্সটিনই বা হয় কি করে?একটা ধনী পরিবারের মা-বাবা তাদের ষোলো বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেবেন কোন দুঃখে?

তবে এ মেয়েকে সে কোনদিন বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবে না।এরকম একটা মেয়েকে বাবা-মা শেষ পর্যন্ত তার গলায় ঝুলিয়ে দেবে জানলে সে ফাঁসির দড়ি নিয়ে ঠিকই কলাগাছে ঝুলে পরতো। তাকে মিথ্যা বলে গ্রামে নিয়ে গিয়ে ফাঁসানো হয়েছে।বন্ধু-বান্ধবকে সে কিভাবে মুখ দেখাবে?

নাফিসও এত সহজে হার মানবে না।বাবা-মায়ের এই নোংরা চাল সে কিছুতেই সফল হতে দেবে না।

এই বিয়ে সে মেনে নেয় নি আর নেবেও না।

কোনদিন। আর এই মেয়েকে মেনে নেবার তো

প্রশ্নই আসে না।

কিন্তু মেয়েটাকে তার কাছে একটু অন্যরকম মনে হচ্ছে।বাসররাতে বর তার চোখের সামনে বসে প্রেমিকার সাথে কথা বলে যাচ্ছে অথচ মেয়েটার কোন বিকার নেই বরং সে হাসছে। পাগল-টাগল না তো!

মেয়েটার মনোভাব বুঝতে হলে ওর সাথে কিছু কথা বলা দরকার। কিন্তু জেনি যেভাবে জোঁকের মত লেগে আছে!জেনি মার্শাল ল’ জারি করেছে– এ মেয়ের সাথে কথা বলা দূরে থাক এর দিকে তাকানোই যাবে না।তাকালেই সে নাফিসের চোখ তুলে ফেলবে। জেনির ধারণা সুযোগ পেলেই নাফিস বউ সেজে বসে থাকা মেয়েটার ওপর ঝাঁপিয়ে

পরবে।ব্যাপারটা নাফিসের জন্য ভীষন

অপমানজনক। এত সহজে কেন সে নিজের ভার্জিনিটি হারাবে?সে কি পার্ভাট নাকি?তাছাড়া তার কি ব্যক্তিত্ব বলে কিছু নেই?

একটা অচেনা মেয়ে বউ সেযে নাফিসের রুমে বসে আছে আর ওর ফোনালাপ শুনে মিটি মিটি হাসছে,এটা যে নাফিসের মনে কি পরিমাণ অস্বস্তি এনে দিচ্ছে তা সে জেনিকে কিভাবে বোঝাবে? এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা ফোন কানে ধরে থাকতেও তার কষ্ট হচ্ছে। নাফিস লক্ষ্য করলো অরণী তার টেবিল থেকে কাগজ কলম নিয়ে কিছু একটা লিখছে।

লেখা শেষ করে সে কাগজটা নাফিসের সামনে মেলে ধরল।নাফিস কাগজটা পড়ল–” ফুলের ঘ্রাণে আমার এলার্জির সমস্যা হয়।একটু পর আমার

হাঁচি শুরু হয়ে যাবে।একবার হাঁচি শুরু হলে তা আর সহজে থামে না।আমি এখন কি করবো?”

নাফিস বিরক্তি নিয়ে অরণীর চোখের দিকে তাকালো। ওর এই তাকানোর অর্থ হচ্ছে, “তোমার এলার্জি হলে আমার কি?”

অরণী হতাশ হলো।

কথা বলতে বলতে নাফিসের ফোনটা হঠাৎ কেটে গেল।নাফিসের ফোনের চার্জ শেষ।সে একটু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

অরণী দু’হাত নেড়ে মাথা ঝুঁকে বলল–ফিনিসড? মানে আপনার ফোনের চার্জ শেষ?এরকম ঝিম মেরে বসে আছেন কেন?আবার চার্জ করে কথা

বলা আরম্ভ করে দিন।

মেয়েটার কন্ঠে বা আচরণে কোনো জড়তা নেই।নাফিস অবাক হলো।

অরণী বলল–সেই প্রথম থেকে এরকম বেকুবের মত তাকিয়ে আছেন কেন? কিছু বলবেন?

–এই মেয়ে,অচেনা মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না!

অরণী ভয় পাওয়া ভঙ্গি করে বলল–না তো!

–আশ্চর্য!তুমি হাসছ কেন?ফাজলামো করার চেষ্টা করছ?

অরণী মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে বলল–উঁহু।

নাফিস উত্তেজিত হয়ে বলল–তাহলে হাসছ কেন?আনসার মি….

–এত ওভার রিয়াক্ট করছেন কেন?আমি কি হাসতেও পারবো না?আচ্ছা আর হাসবো না।শুনুন,জেনিকে এত বেশি মাথায় ওঠাবেন না।মেয়েদের এত বেশি মাথায় ওঠালে পরে পস্তাতে

হয়।তাছাড়া আজকালকার শহুরে মেয়ে……

নাফিস অবাক হয়ে বলল–জেনি কে?

–ওমা,জেনিকে ভুলে গেলেন!জেনি আপনার গার্লফ্রেন্ড, যার সাথে এতক্ষণ প্ল্যান করছিলেন যে কাল সকালে তাকে নিয়ে পালিয়ে কুমিল্লায় চলে যাবেন এবং কোনো এক ফ্রেন্ডের বাসায় উঠবেন।

নাফিস একটু লজ্জা পেল।মনে মনে বলল–এ মেয়ে তো সাংঘাতিক।!এরকম অচেনা পরিবেশে এসে উটকো পরিস্থিতিতে পরেও তার মধ্যে

কোনো ভাবাবেগ নেই,টেনশন নেই।

নাফিস গলার স্বর গম্ভীর করে বলল–লুক!আমি তোমাকে চিনি না।আর এই মুহূর্তে তোমার কাছ থেকে কোনো উপদেশও আমি নিতে চাচ্ছি না।

–আমাকে চেনেন না মানে?আমি অরণী।আজ আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।দিস ইজ ট্রু ট্রু এন্ড ট্রু……………

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password